
প্রিয় জানা,
ফুটবল তোমাকে ভালোবাসে—এ শুধু শব্দ নয়, এটা একটি অনুভব, একটি অলৌকিক সত্য। গত রাতের চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল তারই জীবন্ত প্রমাণ। তুমি আজ আর আমাদের মাঝে নেই, তবু সেই রাতজুড়ে তুমি ছিলে—মাঠে, গ্যালারিতে, উদ্যাপনের প্রতিটি মুহূর্তে।
তোমার কথা ভাবতে গিয়েই মনে পড়ে ফ্রাঞ্জ কাফকার একটি গল্প। বার্লিনের এক পার্কে একটি ছোট মেয়ে তার প্রিয় পুতুল হারিয়ে কাঁদছিল। কাফকা তাকে আশ্বস্ত করতে নিজের হাতে পুতুলের নামে চিঠি লিখে দিতে শুরু করেন, যেখানে লেখা ছিল, ‘আমি ভ্রমণে বেরিয়েছি, ফিরে আসব।’ মেয়েটি সেই চিঠিগুলো পড়ে ধীরে ধীরে ব্যথা ভুলে যায়। একদিন কাফকা তাকে আরেকটি পুতুল দেন, আর মেয়েটি বিশ্বাস করে নেয়—এটাই তার সেই পুরোনো পুতুল, শুধু বদলে গেছে। পুতুলটির ভেতরে সে একদিন একটি চিরকুট খুঁজে পায়:
‘তুমি যা কিছু ভালোবাসো, তা সম্ভবত একদিন হারিয়ে যাবে; কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই ভালোবাসা অন্য কোনো রূপে ফিরে আসবে।’
জানা, তুমিও ঠিক তেমনই ফিরে এসেছ—ভালোবাসার অন্য রূপে। মাঠে তোমার অনুপস্থিতি ছিল শুধু শারীরিক, অনুভবের সবটুকু জুড়ে তুমি ছিলে—জার্সিতে, পতাকায়, চোখের জল আর হাসিতে। তোমার বাবা লুইস এনরিকে যেমনটা বলেছেন, ‘সে আমাদের মাঝে আছে। আমি প্রতিদিন তাকে অনুভব করি।’
গতকাল মিউনিখের মাঠে আমরা সবাই তোমাকে অনুভব করেছি। গ্যালারিতে ঢেউ তুলে দেওয়া সেই আবেগে, শেষ বাঁশির পর ফুটবল-ভক্তদের আনন্দে, সোশ্যাল মিডিয়ায় উপচে পড়া ভালোবাসায়—সবখানেই তুমি ছিলে। পিএসজির নীল জার্সি পরে যেন তুমি ছোট্ট পাখির মতো উড়ছিলে সেই সবুজ মাঠজুড়ে।
তুমি চলে গিয়েও রয়ে গেছ আমাদের মনে, ফুটবলের চেতনায়। তুমি হারিয়ে যাওনি, বরং অন্য রূপে ফিরে এসেছ—একটি গান হয়ে, ভালোবাসা হয়ে, হয়তো একদিন কোনো নতুন শিশুর চোখের ভেতর দিয়ে।
জীবনানন্দ দাশ লিখেছিলেন, ‘একটি নক্ষত্র আসে... সে আসবে মনে হয়।’
জানা, তুমি ঠিকই আসবে—ফুটবলের নিরন্তর আবেগে ভর করে, আবারও কারও ভালোবাসায় ফিরে আসবে তুমি।
ইতি,
তোমার মতোই এক ফুটবলপ্রেমী।