ঢাকা   রোববার ১১ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

নড়িয়ায় শত বছরের পুরনো খাল দখল করে মেয়রের বাড়ির রাস্তা নির্মাণ!

নড়িয়ায় শত বছরের পুরনো খাল দখল করে মেয়রের বাড়ির রাস্তা নির্মাণ!

নড়িয়া পৌরসভার মেয়র এ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে নড়িয়ার বালুর মাঠ এলাকা দিয়ে প্রবাহিত পুরানো খাল দখল করে ড্রেন কাম রাস্তা নির্মাণ করার অভিযোগ উঠেছে।

 

আর এ অভিযোগটির বাস্তবতা খুঁজতে গিয়ে দেখা গেছে, এ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ মুলতঃ খাল দখল করে ড্রেন কাম রাস্তা নির্মাণ করার নামে নিজ বাড়িতে যাওয়ার রাস্তা নির্মাণ করছেন। আর এ রাস্তা নির্মাণ করতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বেশ কিছু পরিবার। 

 

এদিকে মেয়র সাহেব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার গুলোকে এতোটাই ভয় দেখিয়েছেন যে, সাংবাদিকদের সাথে কেউ কথা বলতে পর্যন্ত রাজি হচ্ছে না। 

 

তারা বলেন, "আপনারা সাংবাদিক আমাদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে সংবাদ ছাপাবেন। তারা আপনাদের কিছু বলবে না। কিন্তু আমরা এলাকায় থাকবো। তাই এর জের পরবর্তীতে সুদে আসলে আমাদের কাছ থেকে আদায় করবে"। 

 

অপরদিকে খাল দখল করে ড্রেন কাম রাস্তা নির্মাণ না করার জন্য নড়িয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ পারভেজ বেশ কয়েকবার ঘটনাস্থলে গিয়ে নিষেধ করেছেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা! এ্যাসিল্যান্ডের সেই নিষেধাজ্ঞা অমাণ্য করে ড্রেন কাম রাস্তা নির্মাণের কাজ অব্যাহত রেখেছেন মেয়র আবুল কালাম আজাদ।

 

আবার মেয়র বলছেন, ভবিষ্যতে যদি এই ড্রেন ভেঙ্গে খাল উদ্ধার করে, তাহলে আমরাও পৌরসভার পক্ষ থেকে এ ড্রেন ও রাস্তাটিকে ভেঙ্গে দিব"। যদি ভবিষ্যতে ড্রেন ভেঙ্গে ফেলার সম্ভাবনা থাকে তাহলে সরকারের এতোগুলো টাকা গচ্চা দেয়ার মানে কি, এ প্রশ্নটি উঠে এসেছে অভিজ্ঞ মহলে।

 

স্থানীয়রা বলছেন, এক সময় এ খাল দিয়ে নৌকা চলাচল করতো। এলাকার মানুষ এই খালে চাঁই পেতে মাছ শিকার করতেন। এখন সেই খালকে ড্রেন কাম রাস্তা নির্মাণের জন্য দখল করা হয়েছে।

 

এবার দেখি নড়িয়া পৌর ভূমি অফিস কি বলছে? ভূমি অফিস বলছে, এসএ রেকর্ড এবং বর্তমান বিআরএস রেকর্ডের ৬৯ নং দাগে এটি খাল হিসেবে উল্লেখ রয়েছে। 

 

নড়িয়া পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর আব্দুস সাত্তার খলিফা বলেন,`আমি পঞ্চাশ বছর ধরে এখানে খাল দেখে আসছি। ছোট বেলায় দেখেছি এখানে নৌকা চলাচল করতো। একটি কাঠের পুল ছিল। পানির অনেক স্রোত ছিল। এখানকার মানুষ চাঁই পেতে মাছ শিকার করতো। আজ সেই ঐতিহ্যবাহী খালটি দখল করে ড্রেন ও রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। 

 

স্থানীয় হারুন মিয়া বলেন, "এ প্রাচীন খাল দখল করে ড্রেন ও রাস্তা তৈরীর একেবারেই মূল্যহীন।কারণ এখানকার প্রতিটি বাড়িতে প্রবেশের জন্য রাস্তা রয়েছে। শুধু বিশেষ কারো উপকারের জন্য এ খাল ভরাট করে ড্রেন ও রাস্তা করা হচ্ছে। তাছাড়া নড়িয়া পৌরসভার অনেক রাস্তা ভাঙ্গা ও চলাচলের অনুপযোগী হয়ে আছে। রাস্তায় খানাখন্দের কারণে লোন শিংয়ের মানুষ পাইকপাড়া ঘুরে পৌরসভায় আসে। বিশ টাকার ভাড়া দিতে হয় পঞ্চাশ টাকা। বাংলা বাজার, কালি খোলার রাস্তারও বেহাল দশা। তাই কোভিড-১৯ প্রকল্পের ৩১ লাখ টাকা খরচ করে এ ড্রেন ও রাস্তা না করে, পৌর এলাকার ভাঙ্গা রাস্তা গুলো মেরামত করলে জনগণ অনেক বেশি উপকৃত হতো"।

 

স্থানীয় শম্ভু ঘোষ বলেন, "বাপ-দাদার আমল থেকে এখানে খাল দেখে আসছি। এ খালে নৌকা চলতো। বাজারের ব্যবসায়িরা নৌকা দিয়ে মালামাল এনে বাজারে বিক্রি করতো"।

 

এ ব্যাপারে নড়িয়া পৌর প্রকৌশলী ফিরোজ আহম্মেদ বলেন, "কোভিড-১৯ প্রকল্পের আওতায় ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে ৮০ মিটার দৈর্ঘ্য ড্রেন কাম রাস্তা তৈরীর কাজ চলমান রয়েছে। আমরা কোন খাল দখল করে এ নির্মাণ কাজ করছি না। আমরা মুলত খালের পাশ দিয়ে জনসাধারণের চলাচলের সুবিধার্থে এ কাজটি করছি"। 

 

এ ব্যাপারে নড়িয়া পৌরসভার মেয়র এ্যাডভোকেট মোঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, "আমার বাড়িতে প্রবেশ করার রাস্তা পূর্বে থেকে আছে। তাই নতুন কোন রাস্তার প্রয়োজন নেই। এই রাস্তা ও ড্রেনটি মুলত পৌরবাসীর সুবিধার জন্য করা। বিশেষ করে আমার বাড়ির পেছনে বাড়ৈ পাড়া এলাকার ৭০ টি বাড়ির প্রায় ৪০০ লোকের যাতায়াতের সুবিধার জন্য এ রাস্তাটি করা। এ খালটির উপর প্রায় একশোরও বেশি দোকান ও একটি মসজিদ আছে। ভবিষ্যতে যদি এগুলো ভেঙ্গে খাল উদ্ধার করে, তাহলে আমরাও পৌরসভার পক্ষ থেকে এ ড্রেন ও রাস্তাটিকে ভেঙ্গে দিব"।

 

এ ব্যাপারে নড়িয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ পারভেজ বলেন, "পৌর শহরের ভিতরে খাল দখল করে ড্রেন ও রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ পেয়ে আমি এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একাধিক বার ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজটি বন্ধ করে দিয়েছি"।

শেয়ার বিজনেস24.কম