ঢাকা   শনিবার ৩১ মে ২০২৫, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

৭৫% মুনাফা ডিভিডেন্ড দিতে চায় আইসিবি: প্রভিশনিং শিথিলের প্রস্তাব, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন

শেয়ারবাজার

শেয়ারবিজনেস ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:০৮, ২৯ মে ২০২৫

৭৫% মুনাফা ডিভিডেন্ড দিতে চায় আইসিবি: প্রভিশনিং শিথিলের প্রস্তাব, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন

দেশের সর্বোচ্চ সংখ্যক মিউচুয়াল ফান্ডের ট্রাস্টি প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) চলতি অর্থবছরের অর্জিত মুনাফার কমপক্ষে ৭৫ শতাংশ ইউনিট হোল্ডারদের মধ্যে ডিভিডেন্ড হিসেবে বিতরণের অনুমোদন চেয়েছে। বাকি ২৫ শতাংশ মুনাফা প্রভিশনিংয়ে রাখার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। মূলত ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের হাতে কিছুটা হলেও রিটার্ন তুলে দিতে এই পদক্ষেপ নিতে চায় আইসিবি।

আইসিবি মনে করছে, বাজারের বাস্তবতায় আনরিয়ালাইজড লোকসানের বিপরীতে প্রভিশনিং বাধ্যবাধকতা কিছুটা শিথিল করা প্রয়োজন। এর ফলে যেসব ফান্ড আয় করেছে, তারা অন্তত সীমিত পরিমাণে হলেও ডিভিডেন্ড দিতে পারবে। গত ২২ মে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব পেশ করে আইসিবি। এর আগে ১৭ মে বিএসইসির সঙ্গেও একই সুপারিশ করা হয়।

আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিরঞ্জন চন্দ্র দেবনাথ বলেন, "বিনিয়োগকারীর অর্থেই মিউচুয়াল ফান্ড গঠিত হয়। কিন্তু বাজার পতনের কারণে অনেক ফান্ড বছর শেষে ডিভিডেন্ড দিতে পারেনি। এতে বিনিয়োগকারীরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।" তিনি আরও বলেন, "বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রভিশনিং সংক্রান্ত বিধানে কিছুটা ছাড় দিলে বিনিয়োগকারীদের মাঝে আস্থা ফিরত।"

আইসিবি জানায়, ২০২৪ সালে পরিচালিত ৬২টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৫২টিই লোকসান করেছে, যার মধ্যে ৪৯টি কোনো ডিভিডেন্ডই দিতে পারেনি। মাত্র ৬টি ফান্ডই লাভ ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। অধিকাংশ ফান্ডই বাজারমূল্য পতনের কারণে বিশাল অহসান লোকসানে পড়েছে এবং বাধ্য হয়ে প্রভিশন রাখছে। ফলে মুনাফা থাকলেও ডিভিডেন্ড ঘোষণা করতে পারছে না।

ট্রাস্টি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, কয়েক বছর ধরে ডিভিডেন্ড না পাওয়ায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা হ্রাস পেয়েছে, এবং অনেকেই ইউনিট তুলে নিচ্ছেন। এর প্রভাবে শেয়ারবাজারে লিকুইডিটি সংকট বাড়ছে। আইসিবির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. শরিকুল আনাম বলেন, “রিটার্নের দিক থেকে মিউচুয়াল ফান্ড এখন বন্ড বা এফডিআর-এর চেয়ে পিছিয়ে। আগামী অর্থবছরেও যদি ডিভিডেন্ড না দেওয়া যায়, তাহলে বিনিয়োগকারীরা বাজার ছেড়ে দেবে।”

প্রসঙ্গত, ২০০১ সালের “সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (মিউচুয়াল ফান্ড) বিধিমালা”-এর ধারা ৬৭ অনুযায়ী, মিউচুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগ মূল্য যদি ক্রয়মূল্যের নিচে নামে, তাহলে ডিভিডেন্ড ঘোষণার আগে লোকসানের বিপরীতে পূর্ণ প্রভিশন রাখা বাধ্যতামূলক। ২০২৩ সালে বিএসইসি মৌখিকভাবে ১০০ শতাংশ প্রভিশনিংয়ের নির্দেশ দেয়, যা ডিভিডেন্ড প্রদানে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বর্তমানে মিউচুয়াল ফান্ড খাত একদিকে আস্থা সংকট, অন্যদিকে তারল্য সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ ও বাজার স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে প্রভিশনিং সংক্রান্ত বিধান শিথিল করা এবং নীতিগত সমন্বয় এখন সময়ের দাবি। তা না হলে মিউচুয়াল ফান্ড শিল্প ধ্বংসের মুখে পড়তে পারে, যা সামগ্রিক শেয়ারবাজারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।