
শৈশব থেকেই রং আর রেখার প্রতি ছিল অদম্য ভালোবাসা। খাতা-কলম পেলেই আঁকতেন দৃশ্যপট কিংবা কল্পনার ছবি। সময়ের সঙ্গে ইফ্ফাত আলম জেসিকা বুঝে গেছেন, এটা শুধু শখ নয়, বরং তার সৃষ্টিশীলতার কেন্দ্র। সেই আঁকাআঁকি আর কল্পনা আজ পরিণত হয়েছে ‘সর্বজয়া’ নামের একটি নারীপ্রধান সফল উদ্যোক্তা উদ্যোগে, যার প্রতিটি পোশাকে জেসিকার নিজস্ব ডিজাইন আর গল্পের ছোঁয়া।
মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা জেসিকার জীবনে পরিশ্রম, শৃঙ্খলা ও সীমিত আয়ে সৌন্দর্যের চর্চা ছিল পারিবারিক শিক্ষা। ছোটবেলায় ঈদের কাপড় নিজ হাতে ডিজাইন করেই পেয়েছেন আশপাশের প্রশংসা। তবে পরিবারের প্রত্যাশা ছিল চাকরি—সেই পথেই হাঁটছিলেন জেসিকা। কিন্তু হৃদয়ের গভীরে ছিল নিজস্ব কিছু করার আকাঙ্ক্ষা। এক সহকর্মীর উৎসাহে নিজের ডিজাইন করা কিছু কুশন কাভারের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করার পরই খুলে যায় উদ্যোক্তা হওয়ার দরজা। সেখান থেকেই আসে প্রথম বিক্রি, প্রথম লাভ।
কুশন কাভার দিয়ে শুরু হলেও এখন প্রতিদিন ১২-১৫টি ব্লাউজের অর্ডার পান তিনি। ‘সর্বজয়া’র সিগনেচার পণ্য হিসেবেই তার ব্লাউজ ডিজাইন বেশ জনপ্রিয়। মাসিক বিক্রি ছাড়ায় দুই লাখ টাকা। নিজেই তৈরি করেছেন ৩০-৩২ জন নারী নিয়ে একটি টিম, যারা কেউ পড়াশোনার ফাঁকে, কেউ সংসারের ফাঁকে ঘরে বসে সেলাইয়ের কাজ করছেন।
শুরুটা সহজ ছিল না। শুনতে হয়েছে, “ব্যবসা ছেলেদের কাজ”, “এটা তো শখ, পেশা হবে কী করে?”, “বিয়ের পর সময় পাবে না”। কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি। নিজের বিশ্বাস আর ক্লায়েন্টদের আস্থায় জেসিকা প্রমাণ করেছেন, মেয়েদের স্বপ্নেও শক্তি আছে, নেতৃত্ব দেওয়ার সাহস আছে।
আজ জেসিকা চান, ‘সর্বজয়া’ শুধু একটি পোশাক ব্র্যান্ড না, বরং নারীদের সংগ্রাম ও সাফল্যের প্রতিচ্ছবি হোক। তার স্বপ্ন, একদিন এই ব্র্যান্ড আন্তর্জাতিক বাজারেও জায়গা করে নেবে, আর প্রতিটি সেলাইয়ে বাঁধা থাকবে নারীর অদম্য পথচলার ইতিহাস।