
২০২৪ সালে ইতিবাচক মুনাফা অর্জন করেও বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর ডিভিডেন্ড নীতিমালার কারণে সাতটি তালিকাভুক্ত ব্যাংক শেয়ারহোল্ডারদের কোনো ধরনের লভ্যাংশ দিতে পারেনি। ফলে বাজারে তৈরি হয়েছে হতাশা, ক্ষোভ এবং আস্থার সংকট।
লভ্যাংশ না দেওয়া ব্যাংকগুলো হলো—এনআরবিসি ব্যাংক, সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক এবং ওয়ান ব্যাংক। অথচ ২০২৩ সালে এসব ব্যাংক ২% থেকে ১৫% পর্যন্ত নগদ বা স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছে।
ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১৩ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নির্দেশনার পর ব্যাংকগুলোকে একটি নির্দিষ্ট মানদণ্ড পূরণ করতে বলা হয়। এই মানদণ্ড পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় ডিভিডেন্ড ঘোষণা করতে পারেনি ব্যাংকগুলো, যদিও অনেক ব্যাংক আয় করেছে কিংবা রিজার্ভ পজিটিভ ছিল।
প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এক্সিম, এনআরবিসি, এসবিএসি, স্ট্যান্ডার্ড ও আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের মুনাফা গত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।
তথ্যচিত্রে সাত ব্যাংক
-
এক্সিম ব্যাংক: ২০২৪ সালে ইপিএস দাঁড়িয়েছে ১৮ পয়সা, যা আগের বছর ছিল ২ টাকা ৩৩ পয়সা। এনএভিপিএস ২১.৮২ টাকা। এজিএম ২৮ আগস্ট, রেকর্ড ডেট ১০ জুলাই।
-
আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক: ইপিএস ৬৬ পয়সা, যা আগের বছর ছিল ২.০৪ টাকা। এনএভিপিএস ২০.৮৫ টাকা। এজিএম ১৪ আগস্ট, রেকর্ড ডেট ২৯ জুন।
-
এসবিএসি ব্যাংক: ইপিএস মাত্র ১৩ পয়সা, আগের বছর ছিল ৬৬ পয়সা। এনএভিপিএস ১৩.৪৫ টাকা। এজিএম ১৯ আগস্ট, রেকর্ড ডেট ২৬ জুন।
-
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক: ইপিএস ৭৪ পয়সা, আগের বছর ছিল ১.২৪ টাকা। এনএভিপিএস ১৬.৬৩ টাকা। এজিএম ১৪ আগস্ট, রেকর্ড ডেট ২৯ জুন।
-
এনআরবিসি ব্যাংক: ইপিএস ৮ পয়সা, আগের বছর ছিল ২.৪০ টাকা। এনএভিপিএস ১৬.৫৫ টাকা। এজিএম ২১ আগস্ট, রেকর্ড ডেট ২৬ জুন।
-
আইএফআইসি ব্যাংক: চলতি বছরে ৬৩ পয়সা লোকসান হলেও ক্যাশ ফ্লো ৩.৪৮ টাকা এবং এনএভিপিএস ১৮.১৬ টাকা। এজিএম ১১ সেপ্টেম্বর, রেকর্ড ডেট ১৭ জুলাই।
-
ওয়ান ব্যাংক: মুনাফা ১৪% বাড়লেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালার কারণে লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারেনি।
সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের কড়া ডিভিডেন্ড নীতির ফলে শেয়ারবাজারে ব্যাংক খাতের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কমতে শুরু করেছে। পাশাপাশি যারা দীর্ঘমেয়াদি লভ্যাংশ প্রত্যাশায় ব্যাংকের শেয়ার ধরে রেখেছিলেন, তারাও হতাশ।
ডিভিডেন্ড না দেওয়ার এই ধারা অব্যাহত থাকলে ব্যাংক খাতের শেয়ারদর আরও চাপে পড়তে পারে বলে মত দিয়েছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। তাই বিনিয়োগকারীরা স্বচ্ছ ও যুক্তিযুক্ত ডিভিডেন্ড নীতিমালা চাচ্ছেন, যাতে লাভ করেও শেয়ারহোল্ডাররা বঞ্চিত না হন।