
পুরান ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী সাইফুদ্দিন মোহাম্মদ এমদাদকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে দেশের বেশ কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তি—অভিনেতা, সাংবাদিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বুদ্ধিজীবীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মোট আসামির সংখ্যা ২০১ জন, যার মধ্যে রয়েছেন ১৪ জন জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পীও।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, গত বছরের ৪ আগস্ট রাজধানীর শহীদ মিনার থেকে একটি সরকারবিরোধী মিছিল পরীবাগে পৌঁছালে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতৃত্বে হামলা হয়। গুলিবর্ষণে শিক্ষার্থী সাইফুদ্দিনের চোখে গুলি লাগে। মামলার বাদী এম এ হাশেম রাজু দাবি করেন, তিনি ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। পরে এই ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি বলে পুলিশ আদালতকে জানালে, ৩০ এপ্রিল আদালত মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে।
অভিনেতা মামুনুর রশীদ, চঞ্চল চৌধুরী, রিয়াজ, ফেরদৌস, ভাবনা, শাওন, জায়েদ খান, শমী কায়সারসহ ১৪ তারকা এই মামলার আসামি। অভিযোগ অনুযায়ী, তাঁরা ফেসবুক, টুইটার এবং ‘আলো আসবে’ নামের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে আন্দোলনকারী ছাত্রদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার ও দমননীতিকে গৌরবান্বিত করেন।
এছাড়া মামলায় নাম এসেছে সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, আবেদ খান, মুন্নি সাহা, ফরিদা ইয়াসমিন, মাসুদা ভাট্টিসহ ১২ জন বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তির। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা মিডিয়ার মাধ্যমে ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছেন।
তালিকায় রয়েছেন একাধিক শিক্ষাবিদ ও উপাচার্যও—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আখতারুজ্জামান, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, জাফর ইকবালসহ বিশিষ্টজনেরা। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা মৌন সমর্থনের মাধ্যমে সহিংসতার প্রশ্রয় দিয়েছেন।
মামলায় আরও রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামালসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের নাম, যাঁদের বিরুদ্ধে সরাসরি হত্যাচেষ্টায় মদদ দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এছাড়া, ২৮ এপ্রিল ভাটারা থানায় আরেকটি হত্যাচেষ্টা মামলায় সুবর্ণা মুস্তাফা, অপু বিশ্বাস, নিপুণ আক্তারসহ ১৭ জন অভিনয়শিল্পীর নাম উঠে এসেছে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান’ ঘিরে করা আরেক মামলায়।
এই মামলাগুলো নিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। একপক্ষ একে রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের ন্যায়বিচার হিসেবে দেখলেও, অন্যপক্ষ একে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আঘাত বলে মনে করছে।