
বিশ্বের অভিজাত গাড়ির তালিকার শীর্ষে থাকা রোলস রয়েস এখন ঢাকার রাজপথেও দেখা যাচ্ছে। গত ছয় মাসে বাংলাদেশে এসেছে রোলস রয়েসের বৈদ্যুতিক মডেল ‘স্পেক্টার’ এর আটটি গাড়ি। শিল্প গ্রুপ ও গাড়ি ব্যবসায়ীরা এসব গাড়ি আমদানি করেছেন, যার প্রতিটির মূল্য ৪ থেকে সাড়ে ৪ কোটি টাকা।
এর আগে বাংলাদেশে সবচেয়ে দামি আমদানিকৃত গাড়ির তালিকায় ছিল ফেরারি। তবে রোলস রয়েস স্পেক্টার মডেলের গাড়ি সেই রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে।
বৈদ্যুতিক গাড়িতে শুল্ক সুবিধার কারণে আমদানি বেড়েছে
রোলস রয়েসের তেলচালিত গাড়িগুলোতে ৮২৬ দশমিক ৬০ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়, যা আমদানির মূল্যের তুলনায় ৮ গুণেরও বেশি। তবে বৈদ্যুতিক গাড়ির ক্ষেত্রে এই শুল্কের হার অনেক কম। এ সুযোগেই রোলস রয়েস স্পেক্টার মডেলের আমদানি বেড়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ আমদানি হওয়া একটি রোলস রয়েস স্পেক্টার এর মূল্য ছিল ২ লাখ ৭০ হাজার পাউন্ড (প্রায় ৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা)। বৈদ্যুতিক গাড়ি হওয়ায় শুল্ক–কর দিতে হয়েছে ৮৯ দশমিক ৩২ শতাংশ হারে ৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে এ গাড়ির মোট খরচ হয়েছে প্রায় ৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
কোথা থেকে এসেছে গাড়িগুলো?
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাবে, আটটি রোলস রয়েস আমদানি করেছে বিভিন্ন শিল্প গ্রুপ ও গাড়ি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান:
- বসুন্ধরা মাল্টি ট্রেডিং লিমিটেড
- ফারইস্ট স্পিনিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড
- ইসলাম নিট ডিজাইনস লিমিটেড
- প্রিয়াঙ্কা ট্রেডিং লিমিটেড
- কন্টিনেন্টাল মোটরস
- এশিয়ান ইমপোর্টস লিমিটেড
- এ এম করপোরেশন
- ফোর হুইলস মোটরস
কারা কিনছেন এই গাড়ি?
শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের ব্যবহারের জন্য এই গাড়ি আমদানি করলেও কিছু গাড়ি বিক্রির জন্য বুকিং নেওয়া হয়েছে। গাড়ি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেক্সিমকো পরিবার এবং শীর্ষস্থানীয় পোশাক রপ্তানিকারক ডিবিএল গ্রুপ এর ভাইস চেয়ারম্যান এম এ রহিম রোলস রয়েস কেনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তবে একটি রোলস রয়েস স্পেক্টার, যা বেক্সিমকো পরিবারের জন্য আনা হয়েছিল, গত ৫ আগস্ট সরকারের পট পরিবর্তনের পর আগুনে পুড়ে যায় বলে জানা গেছে।
রোলস রয়েসের আভিজাত্য
রোলস রয়েসের বিশেষত্ব হলো এর বিলাসবহুল নকশা, নিখুঁত ইন্টেরিয়র এবং নিঃশব্দে চলার ক্ষমতা। স্পেক্টার মডেল মাত্র ৪ দশমিক ৪ সেকেন্ডে ৬০ মাইল গতিতে পৌঁছাতে পারে এবং ছোট জায়গাতেও সহজে চালানো যায়।
এক সময় রোলস রয়েস কিনতে শুধু অর্থ থাকলেই হতো না, কোম্পানির শর্ত পূরণ করতে হতো। তবে বর্তমানে সেই শর্ত শিথিল হওয়ায় ক্রেতাদের জন্য রোলস রয়েস কেনা সহজ হয়েছে।
দেশে রোলস রয়েসের মোট সংখ্যা ১২টি
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, গত দুই দশকে শুল্কমুক্ত সুবিধা ও কূটনৈতিক ব্যবস্থায় দুটি রোলস রয়েস আমদানি হয়েছিল। এছাড়া কাস্টমস গোয়েন্দা বিভাগ দুটি রোলস রয়েস জব্দ করেছিল। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ১২টি রোলস রয়েস গাড়ি আছে।
শেষ কথা
বিশ্বের অভিজাত গাড়ি রোলস রয়েসের যাত্রা এখন বাংলাদেশেও। শুল্ক–কর সুবিধার কারণে বৈদ্যুতিক গাড়ির আমদানি বাড়ছে এবং অভিজাত ক্রেতারা এই বিলাসবহুল গাড়ির প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তবে দামি গাড়ির এ বাজারের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর।
শেয়ার বিজনেস24.কম