ঢাকা   শুক্রবার ০৬ জুন ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়াতে প্রস্তুত: বাজেটে প্রণোদনা, আস্থায় ফিরছেন বিনিয়োগকারীরা

শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়াতে প্রস্তুত: বাজেটে প্রণোদনা, আস্থায় ফিরছেন বিনিয়োগকারীরা

২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে ঘিরে শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। প্রণোদনামূলক নীতিমালা, কর ছাড়, বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ এবং শৃঙ্খলা ফেরানোর কঠোর অবস্থান—সব মিলিয়ে বাজারে আশার সঞ্চার হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘদিনের কিছু দাবির প্রতিফলন, নীতিনির্ধারকদের সদিচ্ছা এবং সরকারের সদর্থক বার্তা শেয়ারবাজারকে সামনে এগিয়ে নিতে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

নীতিনির্ধারকদের আশাবাদ
প্রস্তাবিত বাজেটকে "প্রশংসনীয় ও বিনিয়োগবান্ধব" আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বলেন, সরকার শেয়ারবাজার উন্নয়নে অত্যন্ত আন্তরিক ও ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে।

মঙ্গলবার (৩ জুন) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি জানান, বাজেট বক্তৃতায় প্রধান উপদেষ্টা শেয়ারবাজার কেন্দ্রিক পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে—বহুজাতিক ও নেতৃত্বস্থানীয় দেশীয় কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্তি, বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ, শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা এবং শেয়ারবাজারকে অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার পরিকল্পনা।

কর ছাড় ও করহার হ্রাস: বিনিয়োগে বাড়বে আগ্রহ
তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট করহারের ব্যবধান ৫% থেকে বাড়িয়ে ৭.৫ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে, যা তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য বাড়তি প্রণোদনা। পাশাপাশি, ব্রোকারেজ হাউসের লেনদেন কর কমিয়ে ০.০৫% থেকে ০.০৩% এবং মার্চেন্ট ব্যাংকের করহার ১০% হ্রাস করে ২৭.৫০% নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব পদক্ষেপ বাজারে তারল্য বাড়াবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের মূলধনী মুনাফার উপর করহার পূর্বঘোষিত ১৫ শতাংশে রাখা হয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য ইতিবাচক বার্তা বহন করে।

বিনিয়োগকারীদের জন্য সরাসরি সুফল
বিনিয়োগকারীদের খরচ কমাতে বিএসইসি বিও অ্যাকাউন্টের বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণ ফি ৪৫০ টাকা থেকে কমিয়ে ১৫০ টাকা নির্ধারণ করেছে। সেই সঙ্গে সমন্বিত গ্রাহক হিসাব থেকে প্রাপ্ত সুদের ২৫% এখন ইনভেস্টর প্রটেকশন ফান্ডে জমা হবে, যা ভবিষ্যতে বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

ডিভিডেন্ডে কর মওকুফের প্রস্তাবনা
বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণে বিএসইসি সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছে এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত প্রাপ্ত ডিভিডেন্ডে কর মওকুফ এবং তার বেশি ডিভিডেন্ডে ১৫% চূড়ান্ত কর নির্ধারণের প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য।

আস্থার পালে নতুন হাওয়া
প্রস্তাবিত বাজেটের নানা প্রণোদনা ও কাঠামোগত সংস্কারবিষয়ক বার্তা শেয়ারবাজারের প্রতি সরকারের সদিচ্ছা প্রমাণ করে। বিনিয়োগবান্ধব এই দিকনির্দেশনা এবং নীতিগত দৃঢ়তা বাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। দীর্ঘমেয়াদে এসব উদ্যোগ বাজারের স্থিতিশীলতা ও সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেই আশাবাদ ব্যক্ত করছেন সংশ্লিষ্টরা।