
বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি এপ্রিল ২০২৫-এ সামান্য কমে ৭.৫০ শতাংশে নেমে এসেছে, যা মার্চে ছিল ৭.৫৭ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মার্চে ঋণপ্রবাহ কিছুটা বাড়লেও তা স্থায়ী হয়নি। মূলত রমজান ও ঈদ কেন্দ্রিক আমদানি চাহিদা মেটাতে মার্চে ঋণ প্রবৃদ্ধি বাড়লেও এপ্রিল থেকে আবার নিম্নমুখী হয়েছে।
এপ্রিল শেষে বেসরকারি খাতে মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭.২১ লাখ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১.২০ লাখ কোটি টাকা বেশি। তবে মাসওয়ারি প্রবণতা বলছে, ঋণ প্রবৃদ্ধি গত এক বছরে ধারাবাহিকভাবে কমেছে। জুন ২০২৪-এ প্রবৃদ্ধি ছিল ৯.৮৪%, যা এপ্রিল ২০২৫-এ নেমে দাঁড়িয়েছে ৭.৫০%-এ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ঋণ প্রবৃদ্ধি কমার পেছনে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, বিনিয়োগে মন্থর গতি এবং ব্যাংক খাতে গঠনগত দুর্বলতাই বড় কারণ। ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এখন ৩.৪৫ লাখ কোটি টাকা, যা আগের ত্রৈমাসিকের তুলনায় ২১.৩৩ শতাংশ বেশি। মূলধন ঘাটতি ও ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ নীতিও ঋণ বিতরণে প্রভাব ফেলছে।
চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৯.৮ শতাংশ। কিন্তু এপ্রিল পর্যন্ত এই প্রবৃদ্ধির গতি সেই লক্ষ্যে পৌঁছানো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
তবে বাজেট-পরবর্তী পরিস্থিতিতে ব্যাংক কর্মকর্তারা আশাবাদী। একাধিক ব্যাংক সূত্রে জানানো হয়, নতুন বাজেট বাস্তবায়িত হলে এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকলে বেসরকারি ঋণপ্রবাহ বাড়বে। ইতিমধ্যে আমদানি ও রপ্তানিতে ইতিবাচক গতি দেখা যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে আমদানি এলসি খোলা বেড়েছে ১১.৪৫% এবং নিষ্পত্তি ২১.৯৭%। মে মাসে পণ্য রপ্তানি আয়ও বেড়ে হয়েছে ৪.৭৪ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১.৪৫% বেশি।
এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, “সরকার যদি আইন-শৃঙ্খলা ঠিক রাখে এবং বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক নির্ভরতা কমায়, তাহলে ভালো গ্রাহকদের কাছে বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হবে। এতে ঋণ প্রবৃদ্ধি বাড়বে এবং কর্মসংস্থানেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।”
সব মিলিয়ে বেসরকারি ঋণের বর্তমান মন্দার মাঝেও ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী ব্যাংক খাত। বাজেট বাস্তবায়ন ও স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ ধরে রাখা গেলে ঋণ প্রবৃদ্ধিতে নতুন গতি ফিরে আসতে পারে।