
নাইকো দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল আসামিকে খালাস দিয়েছেন আদালত। দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক রবিউল আলম এ রায় ঘোষণা করেন।
মামলার পটভূমি ও বিচার প্রক্রিয়া
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি আসামিপক্ষের আত্মপক্ষ সমর্থন শুনানি ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পর আদালত রায় ঘোষণার জন্য আজকের দিন ধার্য করেন। শুনানিতে আসামিরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। মামলার প্রধান আসামি খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য বিদেশে অবস্থান করায় আদালতে হাজির হতে পারেননি। তার পক্ষে অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তির আবেদন জানিয়ে তাদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে। তবে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ার যুক্তি তুলে ধরে আসামিদের খালাসের আবেদন জানান। বিচারক উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শোনার পর রায় ঘোষণা করেন এবং সব আসামিকে খালাস দেন।
মামলার সূচনা ও অভিযোগ
২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর দুদকের তৎকালীন সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম রাজধানীর তেজগাঁও থানায় খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়, কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠান নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩,৭৭৭ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি সাধন করা হয়েছে।
২০১৮ সালের ৫ মে দুদক এ মামলায় খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। মামলার আসামিদের মধ্যে তিনজন ইতোমধ্যে মারা গেছেন। বাকি আটজনের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সিএম ইউসুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল করপোরেশনের চেয়ারম্যান সেলিম ভূঁইয়া এবং নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।
এদের মধ্যে কাশেম শরীফ, মীর মইনুল হক ও কামাল উদ্দিন পলাতক ছিলেন।
সাক্ষ্যগ্রহণ ও মামলার নিষ্পত্তি
মামলায় ৬৮ জন সাক্ষীর মধ্যে ৩৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। গত ৫ ফেব্রুয়ারি সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হওয়ার পর চূড়ান্ত যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়।
বিচার বিশ্লেষণ শেষে আদালত জানান, মামলার সাক্ষ্যপ্রমাণ এবং যুক্তিতর্কের ভিত্তিতে আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। ফলে খালেদা জিয়াসহ সকল আসামিকে খালাস দেওয়া হয়।
প্রতিক্রিয়া ও পর্যালোচনা
এই রায়কে বিএনপির নেতারা আইনের শাসনের বিজয় হিসেবে দেখছেন, অন্যদিকে সরকারপক্ষের আইনজীবীরা আপিলের বিষয়ে ভাবছেন। এই রায় দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
শেয়ার বিজনেস24.কম