
ঢাকায় এডিস মশার বংশবৃদ্ধি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ঈদুল আজহার ছুটির আগে চালানো এক জরিপে দেখা গেছে, প্রতি ১৫টি বাড়ির মধ্যে ৭–৮টিতেই পাওয়া গেছে ডেঙ্গুবাহী এডিস মশার লার্ভা। জরিপ অনুসারে ব্রুটো ইনডেক্স (বিআই) যেখানে ২০ হলে আশঙ্কাজনক ধরা হয়, সেখানে এখন তা ৫০–৬০-এর মধ্যে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবার মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে ২০২৩ সালের চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে দেশ।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশারের নেতৃত্বে হওয়া জরিপ বলছে, উত্তর ও দক্ষিণ—দুই সিটি করপোরেশনেই মশার ঘনত্ব সমানভাবে বেড়েছে। চলতি বছর ৯ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৪,৯৭৭ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২৩ জনের। এর মধ্যে ঢাকার বাইরে আক্রান্তের হার বেশি, সর্বোচ্চ সংক্রমণ বরিশাল বিভাগে। পরিস্থিতি আরও অবনতির আশঙ্কা করছেন রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা।
সরকারের আইইডিসিআরের সাবেক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তৌহিদ উদ্দিন আহমেদ বলছেন, থেমে থেমে বৃষ্টি আর ভ্যাপসা গরম এডিসের বংশবৃদ্ধির আদর্শ পরিবেশ তৈরি করেছে। মে মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে ৬৩% বেশি বৃষ্টি হয়েছে, জুনেও এমন আবহাওয়ার ধারাবাহিকতা আছে। ব্রিটিশ গবেষক ও বাংলাদেশি বিজ্ঞানী নাজমুল হায়দারও এমন আবহাওয়াকে মশাবৃদ্ধির জন্য উপযোগী বলে অভিহিত করেছেন।
এদিকে কিউলেক্স মশারও ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে, যা সাধারণত গৃহস্থালির পরিবেশে দেখা যায়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাইফুর রহমানের গবেষণায় উঠে এসেছে, গুলশান এলাকায় একদিনে ৯০০ থেকে ২ হাজার পর্যন্ত মশা ধরা পড়েছে। তাঁর মতে, এটি অস্বাভাবিক ও উদ্বেগজনক।
যদিও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দাবি করেছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রস্তুতি ও বাজেট রয়েছে এবং ঈদের পর তৎপরতা আরও বাড়ানো হবে, তবে বিশেষজ্ঞরা তা নিয়ে খুব একটা আশাবাদী নন। তাঁদের মতে, স্থানীয় সরকার ও সিটি করপোরেশনগুলোর মধ্যে কার্যকর তৎপরতার অভাব ডেঙ্গুর বিস্তার ঠেকাতে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে বলে সতর্ক করছেন সংশ্লিষ্টরা।