ঢাকা   শনিবার ১৪ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বরিশালে ডেঙ্গুর ভয়াবহ বিস্তার: ২৪ ঘণ্টায় তিনজনের মৃত্যু, নতুন করে আক্রান্ত ১২৪

গ্রামবাংলা

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২০:৫৪, ১২ জুন ২০২৫

বরিশালে ডেঙ্গুর ভয়াবহ বিস্তার: ২৪ ঘণ্টায় তিনজনের মৃত্যু, নতুন করে আক্রান্ত ১২৪

বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ গেছে তিনজনের, হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন নতুন করে ১২৪ জন। এ নিয়ে ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ১২ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভাগে মোট ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচজনই বরগুনা জেলার বাসিন্দা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গতকাল বুধবার সকাল থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন ১২৪ জন ডেঙ্গু রোগী। এর মধ্যে ৬৭ জনই বরগুনার। বছরের শুরু থেকে বিভাগজুড়ে মোট আক্রান্ত ২ হাজার ৪৮৬ জন। এর মধ্যে বরগুনাতেই ১ হাজার ৫৫২ জন, যা মোট আক্রান্তের প্রায় ৬০ শতাংশ।

মারা যাওয়া তিনজনের মধ্যে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে দুজনের মৃত্যু হয়—বরগুনা সদরের চরপাড়ার চান মিয়া (৭৫) এবং থানাপাড়ার গোসাই দাস (৮৫)। অন্যজন, ইসরাত জাহান (২০), পিরোজপুরের নেছারাবাদের বাসিন্দা, যিনি বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।

বরগুনা এখন বিভাগীয় ডেঙ্গুর প্রধান হটস্পট। শহরের প্রতিটি পাড়া থেকে রোগী আসছে, এমনকি গ্রামাঞ্চলেও ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৯৩ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন। এতে চিকিৎসাসেবায় চরম ব্যাঘাত ঘটছে। হাসপাতালটিতে ৫৪ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও কর্মরত মাত্র ১৮ জন। সীমিত জনবল নিয়ে রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা।

হাসপাতালের চিকিৎসক নিহার রঞ্জন বৈদ্য বলেন, “ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় চিকিৎসক সংকট সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক মাস ধরে বরগুনা হটস্পট হলেও দীর্ঘস্থায়ী কোনো ব্যবস্থাপনা নেই, যা গভীর উদ্বেগের বিষয়।”

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গতকাল বুধবার জরুরি সভা করে স্বাস্থ্য বিভাগ। বিভাগীয় পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল জানান, বরগুনায় ডেঙ্গুর এমন বিস্তার কেন ঘটছে, তা পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া না গেলেও অনুমান করা হচ্ছে—বদ্ধ জলাশয়, ময়লা-আবর্জনা ও পরিচ্ছন্নতার অভাব এর প্রধান কারণ। তিনি স্থানীয়দের সচেতন করতে বলার পাশাপাশি চিকিৎসক সংকট মেটাতে দুজন চিকিৎসক পদায়নের কথা জানান, আরও দুজন খুব শিগগিরই যোগ দেবেন।

বিভাগের অন্যান্য জেলায় পরিস্থিতি তুলনামূলক ভালো থাকলেও ডেঙ্গু মুক্ত নয়। বর্তমানে পুরো বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৩২৪ জন রোগী। এর মধ্যে বরগুনায় ১৯৩ জন, বরিশাল সদর ও শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০০ জন, পটুয়াখালীতে ১৮, পিরোজপুরে ৭, ঝালকাঠিতে ৬ জন রোগী রয়েছেন। কেবল ভোলায় এখনো ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়নি।

এমন সংকটময় সময়ে বরগুনা ও আশপাশের এলাকার মানুষদের সচেতনতা, পরিচ্ছন্নতা এবং প্রশাসনের জরুরি ব্যবস্থাপনাই হতে পারে একমাত্র উত্তরণের পথ।