ঢাকা   মঙ্গলবার ০৩ জুন ২০২৫, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

**সুখের তালিকা করে না ফোর্বস: সালমান খান**

**সুখের তালিকা করে না ফোর্বস: সালমান খান**

“ফোর্বস কখনো পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী ৫০০ মানুষের তালিকা করে না,”—এমন দার্শনিক অথচ বাস্তব কথায় শুরু করলেন খান একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সালমান খান। যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত কার্নেগি মেলন ইউনিভার্সিটির সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে আমন্ত্রিত হয়ে তিনি তরুণদের সামনে তুলে ধরলেন জীবনের আসল মানে, সফলতা ও অর্থের সীমা, এবং আত্মপ্রত্যয়ের গুরুত্ব।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই মার্কিন শিক্ষাবিদ ঘোষণা দেন, কার্নেগি মেলনের সঙ্গে স্কুলহাউস ডট ওয়ার্ল্ড–এর নতুন এক অংশীদারিত্ব শুরু হচ্ছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিশ্বের নানা প্রান্তের স্কুলশিক্ষার্থীদের গণিতে সহায়তা করবে এবং এর জন্য পাবেন কলেজ ক্রেডিট। সবচেয়ে চমকপ্রদ দিক হলো—স্কুলহাউস ডট ওয়ার্ল্ডে পাওয়া দক্ষতার স্বীকৃতি মিলবে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে, যা নতুন এক উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে অনলাইন শিক্ষাকে।

কিন্তু বক্তৃতার হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া অংশ ছিল তাঁর জীবনদর্শন। সালমান খান বলেন, “তোমার জীবনের মানে তুমি নিজেই খুঁজে নাও—তা যেন সমাজ, বিজ্ঞাপন বা পরিবার ঠিক না করে দেয়। খ্যাতি, টাকা, বাহারি গাড়ি কিংবা ফলোয়ারের সংখ্যাই সাফল্যের মানদণ্ড নয়।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা যে সমাজে বাস করি, সেখানে সবাই সফলতার একটি কৃত্রিম মানে তৈরি করে দিয়েছে—যা মাপা যায় সিজিপিএ, ইনকাম কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ার জনপ্রিয়তায়। কিন্তু সত্যিকারের সাফল্য ও সুখ আসে অর্থবহ জীবন, তৃপ্তি, উদ্দেশ্য, সম্পর্ক আর মানসিক প্রশান্তি থেকে—যা মাপা যায় না।”

সালমানের মতে, পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষগুলোকে আমরা অনেক সময় চিনিই না। তাঁদের হয়তো দামি গাড়ি নেই, বিশাল ফলোয়ার বেসও নেই—তবু তাঁরা আনন্দে জীবন কাটান, কারণ তাঁদের রয়েছে অর্থপূর্ণ উদ্দেশ্য, পরিবার-বন্ধুর ঘনিষ্ঠতা, সুস্বাস্থ্য ও সৃজনশীলতার সুযোগ।

তিনি নবীনদের পরামর্শ দেন—“উচ্চাকাঙ্ক্ষা থাকুক, কিন্তু তা যেন শুধু অর্থ বা ক্ষমতার পেছনে না ছোটে। বাস্তবতা ও স্বপ্নের মাঝামাঝি অবস্থানে থেকেও জীবনকে জয় করা যায়।” জীবনের কঠিন মুহূর্তগুলোকে এড়িয়ে না গিয়ে সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করতে বলেন তিনি। কারণ, “অস্বস্তি থেকেই আসে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি।”

সমাবর্তনের এই বক্তৃতা তরুণদের মনে শুধু অনুপ্রেরণা নয়, বাস্তব জীবনের মানে ও মূল্যবোধ নিয়েও এক গভীর ভাবনার জন্ম দিল—যা হয়তো কোনো র‍্যাঙ্কিংয়ে উঠে আসে না, কিন্তু জীবনের মানচিত্রে সবচেয়ে মূল্যবান।