
দেশের শেয়ারবাজার দীর্ঘদিন ধরেই নানামুখী অনিয়ম, কারসাজি ও বিনিয়োগকারী আস্থার সংকটে ভুগছে। এই প্রেক্ষাপটে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মন্দাবস্থায় থাকা পুঁজিবাজারে গতি ফেরাতে কর সুবিধাসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারমূলক পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
সোমবার (২ জুন) টেলিভিশনে প্রচারিত বাজেট বক্তৃতায় তিনি জানান, তালিকাভুক্ত ও তালিকা-বহির্ভূত কোম্পানির করহারে ব্যবধান আরও বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যাতে কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে বাড়তি উৎসাহ দেওয়া যায়। একইসঙ্গে ব্রোকারহাউজের লেনদেনে উৎস কর কমানো এবং মার্চেন্ট ব্যাংকের আয়ে করহার হ্রাসের প্রস্তাবও এসেছে এবারের বাজেটে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “বিগত সরকারের অনিয়ম, কারসাজি ও দুর্নীতির কারণে প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত দেশের শেয়ারবাজারে গতি ফিরিয়ে আনতে সরকার নানা উদ্যোগ নিচ্ছে।” তিনি জানান, বাজারে স্বচ্ছতা ও আস্থা ফিরিয়ে আনতে সরকার কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে— বহুজাতিক কোম্পানিগুলোতে সরকারের অংশীদারিত্ব কমিয়ে তাদের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করা, দেশীয় সম্ভাবনাময় কোম্পানিগুলোকে বাজারে আনতে প্রণোদনা প্রদান, কারসাজি রোধে বাস্তবভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ এবং অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ।
শেয়ারবাজার থেকে বন্ড ও ইক্যুইটির মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহের সুযোগ বাড়িয়ে ব্যাংকনির্ভরতা কমানোর দিকেও জোর দেওয়া হয়েছে।
এক্ষেত্রে গত ১১ মে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে সরকারের উচ্চপর্যায়ের সচেতনতা বিশেষভাবে লক্ষণীয়, যেখানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস শেয়ারবাজার সংস্কার বিষয়ে পাঁচ দফা নির্দেশনা দেন। নির্দেশনাগুলোর মধ্যে ছিল— বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে দ্রুত তালিকাভুক্ত করা, সম্ভাবনাময় দেশীয় কোম্পানিগুলোর জন্য প্রণোদনা, বিদেশি বিশেষজ্ঞ এনে তিন মাসের মধ্যে সংস্কার শুরু, অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে শিগগির ব্যবস্থা এবং ব্যাংকের পরিবর্তে শেয়ারবাজারভিত্তিক তহবিল সংগ্রহে উৎসাহ প্রদান।
অর্থ উপদেষ্টার বাজেট বক্তৃতায় এসব নির্দেশনার প্রতিফলন স্পষ্ট, যা একটি সক্রিয়, স্বচ্ছ ও বিনিয়োগবান্ধব পুঁজিবাজার গঠনে সরকারের নতুন প্রত্যয়ের প্রতিচ্ছবি বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।