
মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান নগদ লিমিটেড-এর ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শ্যামল বি দাস দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে নগদের মালিকানা, শেয়ার এবং সার্বিক পরিচালনার দায়িত্ব বাংলাদেশ ডাক বিভাগ নিজের হাতে নিয়েছে। গত মঙ্গলবার ডাক বিভাগের সঙ্গে এক আনুষ্ঠানিক সভায় শ্যামল দাস নগদের সব দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। তার পরিবর্তে ডাক অধিদপ্তরের পরিচালক আবু তালেব-কে নতুন সিইও হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
সভায় নগদের সাম্প্রতিক অস্থিরতা ও বাজারে প্রতিযোগিতার প্রেক্ষাপটে, প্রায় ৯ কোটি গ্রাহকসম্পন্ন এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনাগত স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে জরুরি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নতুন সিইও আবু তালেবকে তাৎক্ষণিকভাবে সহযোগিতার আশ্বাস দেন নগদের ডেপুটি সিইও মো. মুয়িয।
ডাক বিভাগের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সরকার অনলাইন জুয়া, মানি লন্ডারিং ও প্রতারণা রোধে মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কড়া নির্দেশনা দিয়েছে। নগদের নতুন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এই নির্দেশ পালনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিশেষ করে ভুয়া হিসাব বন্ধ, এনআইডি অনুযায়ী একাধিক অ্যাকাউন্ট রোধ, ভুয়া পরিবেশক নিয়োগ বন্ধ এবং প্রতারণামূলক কার্যক্রম বন্ধে সক্রিয় পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নগদের কোনো কর্মীকে চাকরিচ্যুত না করা এবং ঈদের আগে বেতন-বোনাস পরিশোধের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে।
পদত্যাগপত্রে শ্যামল বি দাস অভিযোগ করেন, বিগত মাসগুলোতে বারবার পদবি পরিবর্তন, পলাতক মালিকপক্ষের অনুপস্থিতি, বেআইনি ই-মেইল আদেশ, দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের অসহযোগিতা এবং বাংলাদেশ ব্যাংক নিযুক্ত কর্মকর্তাদের বারবার পরিবর্তনের কারণে প্রতিষ্ঠানটি কার্যত অস্থির হয়ে পড়ে। তিনি মনে করেন, এমন একটি সংকটময় অবস্থায় দায়িত্ব পালন করা এবং কোটি মানুষের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। জনস্বার্থে এবং আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতার স্বার্থে তিনি দ্রুত প্রশাসনিক পদক্ষেপের অনুরোধ জানান।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর, অন্তর্বর্তী সরকার নগদে প্রশাসক নিয়োগ দেয়। পরবর্তীতে নিরীক্ষায় বেরিয়ে আসে ২ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকার গরমিল, অনলাইন জুয়া ও মানি লন্ডারিংয়ে জড়িত থাকার প্রমাণ, ভুয়া এজেন্ট ও পরিবেশক দেখিয়ে অতিরিক্ত ই-মানি তৈরি, এবং সরকারি ভাতা বিতরণের একচেটিয়া সুবিধা নেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ। এ ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংক ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে।
প্রসঙ্গত, নগদ (থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস লিমিটেড) একটি লাইসেন্সধারী ভেন্ডর এজেন্সি, যা বাংলাদেশ ডাক বিভাগের অধীনে পরিচালিত হয়। এখন নতুন ব্যবস্থাপনার অধীনে প্রতিষ্ঠানটি কীভাবে স্থিতিশীলতা ফেরাতে পারে, সেটাই দেখার বিষয়।