ঢাকা   শুক্রবার ০৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বাবার লাশ রেখে কোরবানির হাটে গরু বিক্রি—নবম শ্রেণির আরিফুলের কাঁধে সংসারের ভার

গ্রামবাংলা

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২১:২১, ৫ জুন ২০২৫

বাবার লাশ রেখে কোরবানির হাটে গরু বিক্রি—নবম শ্রেণির আরিফুলের কাঁধে সংসারের ভার

রাজশাহীর চরাঞ্চল থেকে কোরবানির গরু নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন কোহিনূর শেখ। কিন্তু ঢাকার পথে ট্রাক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তিনি। বাবার লাশ দাফনের পরদিনই গরু নিয়ে হাটে ছুটতে হয় তার নবম শ্রেণির স্কুলপড়ুয়া ছেলে আরিফুল ইসলামকে। সংসারের ঋণ শোধ করতেই তাকে নিতে হয়েছে এই কঠিন দায়িত্ব।

গত সোমবার থেকে ঢাকার বছিলা পশুর হাটে খোলা আকাশের নিচে তিনটি গরু নিয়ে অপেক্ষা করছিল আরিফুল। আজ বৃহস্পতিবার সবগুলো গরুই বিক্রি হয়েছে। বাজার মন্দা হলেও গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর অনেকেই এগিয়ে আসেন। আর্থিক সহযোগিতাও করেন কেউ কেউ। বিক্রির মোট মূল্য দাঁড়ায় ৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা।

কোহিনূর শেখ ছিলেন পদ্মাপারের জেলে। নদীতে মাছ ধরেই চলতো সংসার। আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় তিনি বর্গা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছিলেন। কিন্তু ফলন ভালো হলেও বাজারে দাম না থাকায় প্রায় তিন লাখ টাকা লোকসান হয়। এই ঋণ শোধ করতেই গরু বিক্রির সিদ্ধান্ত।

টাঙ্গাইলে দুর্ঘটনার রাতে ট্রাকেই ছিলেন কোহিনূর ও আরিফুল। বাবা বসেছিলেন গরুর পাশে, আরিফুল ছিলেন চালকের পাশে। পেছন থেকে এক সবজির ট্রাক এসে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় কোহিনূরের।

গরু বিক্রি হলেও দুশ্চিন্তার শেষ নেই পরিবারে। নদী ভাঙনে চারবার ঘর হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন পদ্মার পলাশী ফতেপুরে। এখন সেখানেও পদ্মা নদী আবার ধেয়ে আসছে। নেই স্থায়ী জমি, নেই আয়-রোজগারের পথ। এমন অবস্থায় বাবা হারানোর শোক আর সংসারের দায়ভার—দুটোই বয়ে বেড়াতে হচ্ছে শিশু আরিফুলকে।

তার মা হাফেজা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, "আমার ব্যাটার এখন কী হইব। সে কিচ্ছু জানে না। এই বয়সে কীভাবে সংসারের বোঝা টানবে?"

একটি দুর্ঘটনা যেন মুছে দিয়েছে স্বপ্ন, ভেঙে দিয়েছে ভবিষ্যতের পরিকল্পনা। পদ্মাপাড়ের এই পরিবারের চোখে এখন শুধুই অন্ধকার। আর কোরবানির ঈদের এই মৌসুমে সেটাই বড় এক মানবিক বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।