
যে ফুলের নাম নিজ হাতে রেখেছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর—সেই বিরল প্রজাতির 'উদয়পদ্ম' এবার দেখা দিয়েছে টাঙ্গাইলে। টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ি উপজেলার ঐতিহ্যবাহী নওয়াব শাহী জামে মসজিদের উত্তর পাশে সম্প্রতি ফুটেছে এই শুভ্র সৌন্দর্যের ফুল, যা বাংলায় 'হিমচাঁপা' নামেও পরিচিত। এর বৈজ্ঞানিক নাম Magnolia grandiflora।
শুভ্র রঙের ডিম আকৃতির এই ফুলটি দেখতে যেমন মোহনীয়, তেমনি ছড়ায় স্নিগ্ধ সুঘ্রাণ। কাঁঠাল পাতার মতো ঘন সবুজ পাতায় ঘেরা গাছটি দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্যে বিমোহিত করে। ফুলটির গঠনও বেশ জটিল—এর মাঝখানে বহু পুংকেশর ও ডিম্বাশয় ঘিরে থাকা পাপড়ির বেষ্টনী যেন এক রহস্যের আড়াল। ফলে সহজে এই ফুলে পরাগমিলন ঘটানো পোকামাকড়ের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।
এই উদয়পদ্ম কীভাবে নওয়াব শাহী মসজিদের আঙিনায় এলো তা জানা না গেলেও, স্থানীয় পেশ ইমাম ইদ্রিস হোসাইন জানান, “আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগেই এই গাছটি এখানে ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, এর বয়স একশ বছরেরও বেশি।”
বাংলাদেশে উদয়পদ্ম একটি সংরক্ষিত প্রজাতি। ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের অধীনে একে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এই গাছটি খুব ধীরে বর্ধনশীল এবং বিবর্তনের ইতিহাস অনুযায়ী এটি পৃথিবীর প্রাচীনতম সপুষ্পক গাছগুলোর একটি। গবেষণায় দেখা যায়, ম্যাগনোলিয়া গোত্রীয় এই উদ্ভিদের জীবাশ্ম নমুনা একশ মিলিয়ন বছর আগেও ইউরোপ, আমেরিকা ও এশিয়ায় ছিল।
উচ্চতায় ১৮ থেকে ৩০ মিটার পর্যন্ত বড় হতে পারে এ গাছ। যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের জাতীয় ফুল হিসেবেও স্বীকৃত এটি। গ্রীষ্ম ও উপগ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলজুড়ে, যেমন মেক্সিকো, মালয়েশিয়া ও ভারতীয় উপমহাদেশেও এই উদ্ভিদের দেখা মেলে। ফুলের মনোমুগ্ধকর রূপ, ঘ্রাণ এবং ধীর বৃদ্ধির বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি শহরের সৌন্দর্য বর্ধনে বা ‘ল্যান্ডস্কেপিং’-এ ব্যবহৃত হয়।
উল্লেখ্য, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শুধু এই ফুলটির নামকরণই করেননি, তাঁর কবিতায় ও গানে উদয়পদ্ম বা ম্যাগনোলিয়ার ঘ্রাণ, রূপ ও প্রতীকমূলক তাৎপর্য তুলে ধরেছেন বহুবার। তাই এই ফুল শুধু একটি উদ্ভিদ নয়, বরং আমাদের সাহিত্যের এক জীবন্ত প্রতীক।