
শ্রম দিবসে জন্ম নেওয়া সংগীতের মহান সাধক মান্না দে ছিলেন কেবল একজন শিল্পী নন, ছিলেন এক সুরযোদ্ধা। ১ মে, বিশ্ব শ্রম দিবসেই জন্ম তাঁর—যেন সুরের শ্রমে জীবন কাটানো এক প্রকৃত সাধকের জন্মকথা। বাংলা ও উপমহাদেশের সংগীতজগতে যে ক’জন কিংবদন্তি নাম অবিস্মরণীয়, মান্না দে তাঁদেরই একজন।
জীবনের শুরুটা হয়েছিল কলকাতায়, ১৯১৯ সালে। কাকা কৃষ্ণচন্দ্র দে-এর হাত ধরেই সংগীতের হাতেখড়ি। পড়াশোনার পাশাপাশি সমান পারদর্শিতা ছিল ক্রীড়াক্ষেত্রেও। তবু সুরের পথেই এগিয়ে গেছেন তিনি, আর হয়ে উঠেছেন ‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা’, ‘জীবন খাতে কে পায়’-এর মতো গানের অনন্ত কণ্ঠস্বর। হিন্দি, বাংলা ছাড়াও গেয়েছেন বহু ভাষায়, সবখানেই মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন নিজের অনবদ্য কণ্ঠ ও আবেগ দিয়ে।
তাঁর জীবনজুড়ে ছিল এক প্রেমগাথা, সুলোচনা কুমারনের সঙ্গে সংগীতের মঞ্চে পরিচয় থেকে শুরু। একসঙ্গে গাওয়া ‘আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ’ যেন বাস্তবে রূপ নেয়। পরিবারে নানা বাধা থাকলেও মা মহামায়ার সমর্থনে ১৯৫৩ সালে বিয়ে করেন সুলোচনাকে। জীবন চলেছে সংগীত ও ভালোবাসার মিশেলে। কিন্তু ২০১২ সালে স্ত্রীর মৃত্যুর পর একাকীত্বে ভেঙে পড়েন মান্না দে। প্রতিদিন স্ত্রীর ছবির দিকে চেয়ে কেটেছে তাঁর সময়। চোখে জল, মনে গানের কথা—তাঁর একটাই ইচ্ছা ছিল, স্ত্রীর স্মৃতিতে একটি অ্যালবাম করবেন।
২০১৩ সালে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে চিকিৎসকদের বারবার বলতেন, “আমাকে তাড়াতাড়ি ছেড়ে দিন, স্ত্রীর স্মরণে একটা অ্যালবাম করছি।” চিকিৎসক দেবী শেঠি বুঝে উঠেছিলেন এই আবেগের গভীরতা। স্ত্রীর ছবি এনে দিয়েছিলেন কেবিনে। কিন্তু জীবন আর সায় দেয়নি। ২৪ অক্টোবর, ২০১৩—চলে যান কিংবদন্তি, রেখে যান শেষ গান না গাওয়ার এক অপূর্ণতা।
মান্না দে-র এই ‘শেষ না বলা গান’ যেন আমাদের চোখে জল আনে, আর মনে করিয়ে দেয়—ভালোবাসাই একজন শিল্পীর জীবনের সবচেয়ে সত্যি সুর। সেই সুর রেকর্ড না হলেও বাজে কোটি ভক্তের হৃদয়ে, আজও, প্রতিদিন।