
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় জব্দ করা ৭০ কেজি জাটকা মাছ এতিমখানা ও মাদ্রাসায় বিতরণের জন্য পাঠানো হলেও, সেই মাছ লুটের ঘটনায় সৃষ্টি হয়েছে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড়। বুধবার সন্ধ্যায় উপজেলার আমিরাবাদ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে, যেখানে স্থানীয় কয়েকজন মাছের আড়তদারের বিরুদ্ধে এতিম শিশুদের প্রাপ্য খাদ্য লুট করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, উপজেলা মৎস্য কার্যালয়ের উদ্যোগে পরিচালিত জাটকা রক্ষা অভিযানে আমিরাবাদ ও দশানী বাজার এলাকা থেকে মোট ৭০ কেজি জাটকা মাছ জব্দ করা হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস। পরে এই জাটকা বিতরণ করা হয় হাজীপুর ও ফরাজীকান্দি মাদ্রাসা ও এতিমখানায় এবং কিছু দুস্থ মানুষের মাঝেও দেওয়া হয়।
কিন্তু সন্ধ্যায় মাদ্রাসার শিক্ষক ও ছাত্ররা যখন আমিরাবাদ বেড়িবাঁধ এলাকায় পৌঁছান, তখন বাজারের কয়েকজন প্রভাবশালী আড়তদার—যেমন আবুল প্রধান, আরিফ গাজী, সেরু প্রধানিয়া ও দেলু বেপারী—তাঁদের পথরোধ করেন। অভিযোগ অনুযায়ী, তাঁরা ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে সমস্ত জাটকা ছিনিয়ে নেন। বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ সফল হতে পারেননি।
ফরাজীকান্দি মাদ্রাসার শিক্ষক মো. আল আমিন ও হাজীপুর মাদ্রাসা কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম জানান, তাঁরা বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে মৎস্য কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন। ঘটনার পর অভিযুক্তদের মধ্যে দেলু ব্যাপারী ফোনে দায় স্বীকার করে বলেন, “এটা আমাদের ভুল হয়েছে। জাটকা ফেরত দেব।”
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস জানান, তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং জাটকা উদ্ধারে পদক্ষেপ নিচ্ছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, “এতিমদের জন্য নির্ধারিত খাবার ছিনিয়ে নেওয়া অত্যন্ত নিন্দনীয় ও দুঃখজনক। তদন্ত শুরু হয়েছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ ঘটনাটি সমাজে মানবতা ও নৈতিকতা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে, তা আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। যেখানে এতিমদের মুখে একবেলা খাবার তুলে দেওয়ার কথা ছিল, সেখানে তা লুটের শিকার হওয়া শুধু আইনের নয়, মানবিকতারও বড় চরম অবক্ষয়।