অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঋণ ব্যবস্থাপনায় জালিয়াতির চরম মূল্য দিচ্ছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক। ২০২৩ সালে যেখানে ব্যাংকটি ৩২৯ কোটি টাকা মুনাফা করেছিল, সেখানে ২০২৪ সালে উল্টো ৪০৫ কোটি টাকা লোকসানে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বৃহস্পতিবার পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে এ বার্ষিক প্রতিবেদন অনুমোদনের পাশাপাশি জানানো হয়, বড় অঙ্কের এ লোকসানের কারণে ২০২৪ সালের জন্য কোনো লভ্যাংশ দেওয়া হচ্ছে না।
দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংকটি ছিল সাবেক সরকারঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী ও এস আলম গ্রুপের কর্ণধার মোহাম্মদ সাইফুল আলমের (এস আলম) নিয়ন্ত্রণে। তার পরিবার ব্যাংকটির প্রায় ৭০ শতাংশ ঋণ নিজেদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে স্বতন্ত্র পরিচালক দিয়ে পুনর্গঠন করে। এরপরই ধরা পড়ে, কৌশলে নিয়মিত দেখানো বহু ঋণ আসলে খেলাপি। দ্রুতই গ্রুপটির বড় অঙ্কের ঋণ অনাদায়ী হয়ে পড়ে।
২০২৪ সালের শেষে ব্যাংকটির আমানতের পরিমাণ ছিল ৪৩ হাজার ১৪৩ কোটি টাকা, বিপরীতে ঋণ দাঁড়ায় ৬০ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা। সেই সময় খেলাপি ঋণের হার দাঁড়ায় ৩০ শতাংশ, যা বর্তমানে দ্বিগুণে পৌঁছেছে। মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকায়। ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, আগে সুদ আয় ছাড়াই ঋণ প্রদানের মাধ্যমে কৃত্রিম মুনাফা দেখিয়ে কর পরিশোধ ও শেয়ারধারীদের লভ্যাংশ দেওয়া হয়েছে—যা আর্থিক ক্ষতির গভীরতা আরও বাড়িয়ে তোলে।
বর্তমানে ব্যাংকটি ঋণ আদায়েও সফল হচ্ছে না, আবার আমানতকারীদের টাকার চাহিদাও মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। ঋণের বিপরীতে উচ্চ সুদে ধার নেওয়া অর্থের চড়া সুদ মেটানোয় ব্যয় আয়ের তুলনায় অনেক বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংক যদি নিরাপত্তা সঞ্চিতিতে ছাড় না দিত, তবে লোকসানের অঙ্ক আরও বেড়ে যেত।
তবে নতুন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ কিছুটা আশার কথা শোনাচ্ছে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে নতুন পর্ষদ দায়িত্ব নেওয়ার পর সাড়ে ৭ লাখ নতুন হিসাব খোলা হয়েছে, যাতে জমা হয়েছে ৩,৬২৪ কোটি টাকা। এ সময়ে আদায় হয়েছে ২,২২৩ কোটি টাকার ঋণ এবং ২৩ হাজার কোটি টাকা আদায়ের জন্য মামলা করা হয়েছে। চলতি দায়িত্বে থাকা ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু রেজা মো. ইয়াহীয়া বলেন, ‘ঋণের বড় অংশ আদায় করতে পারছি না। তবে আমানত বাড়িয়ে ব্যাংকটির স্বাভাবিক কার্যক্রম সচল রাখার চেষ্টা চলছে।’
























