
গ্রিন রাউজান আর ক্লিন রাউজান গড়ার প্রত্যয়ে অনন্য এক নজির সৃষ্টি করল রাউজান পৌরসভা মেয়র জমিরউদ্দীন পারভেজ। তিনি সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর নির্দেশে পৌর এলাকাকে প্লাস্টিকমুক্ত ও আবর্জনামুক্ত করার লক্ষ্যে এলাকায় প্রথমবারের মতো বসালেন আবর্জনার হাট। বিশেষ করে দুস্থ ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষরা এলাকার প্লাস্টিক বোতল আর ময়লা বস্তা ভর্তি করে এনে হাটে বিক্রি করবে, আর প্রতিবস্তা ১০০ টাকায় কিনে নেবে পৌরসভা।
উল্লেখ্য, সারা বাংলাদেশের পৌরসভার ইতিহাসে এই উদ্যোগ ও আয়োজন প্রথমবারের মতো বলে জানান মেয়র জমিরউদ্দীন পারভেজ। গত ২০২২ সালে প্রথম পৌরসভায় এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেন পিংকসিটিখ্যাত রাউজানের সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় রাউজান পৌরসভার অপচনশীল বর্জ্য সংগ্রহ কর্মসূচি দেশজুড়ে প্রশংসিত হয়েছে।
এই কৌশল অনুসরণ করার জন্য দেশের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতাভুক্ত পৌরসভাগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে সরকারি সংস্থা। পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভাগীয় পর্যায়ের এক বৈঠকে রাউজান পৌরসভার মেডিকেল বর্জ্য সংগ্রহ কর্মসূচির প্রশংসা করা হয়। এই কর্মসূচি দেশের অন্য পৌরসভায় অন্তর্ভুক্ত করে বাস্তবায়নের সুপারিশও করা হয়।
রাউজান পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, বিগত ২০২২ সালের শেষের দিকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ স্মারকমূলে জারি করা এক চিঠিতে বলা হয়, তৃতীয় নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নতিকরণ (পৌর) প্রকল্পের আওতায় যেসব পৌরসভা অন্তর্ভুক্ত আছে, সেসব পৌরসভা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় রাউজান পৌরসভার কৌশল গ্রহণ করে প্রকল্প হাতে নিতে হবে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, রাউজানের সংসদ সদস্য ফজলে করিম চৌধুরীর পরামর্শে রাউজান পৌরসভার মেয়র জমির উদ্দীন পারভেজ প্রায় এক বছর আগে পৌরসভার পরিবেশবান্ধব ও পরিচ্ছন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলেন। সংসদ সদস্য প্রায় প্রতি সপ্তাহে বর্জ্য কেনার হাটে উপস্থিত থেকে ক্রেতা-বিক্রেতাকে প্রেরণা দিয়ে আসছিলেন। এই প্রক্রিয়া ও বর্জ্যহাট চলমান রেখে মেয়র প্রশংসিত হয়েছেন।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র বলেন, ‘পৌরসভাকে দূষণমুক্ত, পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশবান্ধব রাখার জন্য এই কর্মসূচি চলমান রেখেছি। এই কর্মসূচির আওতায় সুবিধাবঞ্চিত ও দুস্থ মানুষের কাছ থেকে প্রতিবস্তা ১০০ টাকা করে কিনে নিচ্ছি। এতে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। শত শত মানুষ প্রতি হাটে কয়েক বস্তা বর্জ্য নিয়ে হাজির হয়। এতে করে এলাকা প্লাস্টিক ও আবর্জনামুক্ত হচ্ছে, তারাও লাভবান হচ্ছে আর্থিকভাবে।
পরিচ্ছন্নতা ও দূষণমুক্ত এ কর্মসূচি নিয়ে জনগণকে সচেতন করতে পৌরসভার উদ্যোগে নানা আয়োজন অব্যাহত রয়েছে। সামাজিক সংগঠন, গার্লস গাইড, স্কাউট ছাড়াও ছাত্রছাত্রীদের মাঝেও এ কর্মসূচি ছড়িয়ে দেয়ার নানান প্রচেষ্টা রয়েছে পৌরসভার।’
একটি সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার বস্তা বর্জ্য সংরক্ষিত হয়েছে। সংরক্ষিত প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে প্লাস্টিক সরঞ্জাম এবং পচনশীল আবর্জনা থেকে জৈব সার ও মাছ-মুরগির খাদ্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।
রাউজান পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে ৪০ শতক জায়গায় প্রতিষ্ঠিত ‘ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই’ ফ্যাক্টরিতে পচনশীল বর্জ্য থেকে এ পর্যন্ত ৩৫ টন সার এবং ৭ টন লার্ভা উৎপাদিত হয়। প্রায় ১০০ টন বর্জ্য থেকে এসব উৎপাদিত হয়।
পৌরসভার কনজারভেন্সি ইন্সপেক্টর মো. এরফান উদ্দীন আবীর বলেন, এই ১০০ টন বর্জ্য যদি এলাকার আনাচ-কানাচে পড়ে পচে যেত, তাতে পরিবশে দূষিত হতো, মিথেন গ্যাস প্রভাব ফেলত বায়ুমণ্ডলে। প্লাস্টিক ফ্যাক্টরি থেকেও রিসাইক্লিং করে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন প্লাস্টিক সামগ্রী, যেমন তার, প্লাস্টিক চিপস ইত্যাদি। কয়েক মাসের মধ্যেই সেসব পণ্য রপ্তানি শুরু হবে, যা এখন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
শেয়ার বিজনেস24.কম