
দেশের শেয়ারবাজারে দীর্ঘদিনের ধারাবাহিক ধস ও বিনিয়োগকারীদের সীমাহীন ক্ষতির প্রতিবাদে রাজধানীর মতিঝিলে বৃহস্পতিবার (৮ মে) এক অভিনব কর্মসূচি পালন করেছেন ক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা। তারা সাদা কাফনের কাপড়ে নিজেকে মুড়ে রাজপথে শুয়ে পড়ে জানান দেন, এই বাজার যেন বিনিয়োগকারীদের অর্থনৈতিক ‘মৃত্যুর’ প্রতিচ্ছবি।
বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে বক্তারা শেয়ারবাজারে সংকটের জন্য সরাসরি দায়ী করেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদকে।
তারা বলেন, “বর্তমান বিএসইসি চেয়ারম্যান একজন অজ্ঞ ও অযোগ্য ব্যক্তি, যিনি শেয়ারবাজার পরিচালনার সামান্য যোগ্যতাও রাখেন না। তার ভুল সিদ্ধান্ত ও অব্যবস্থাপনার ফলেই আজ বাজার এই ধ্বংসাত্মক অবস্থায় পৌঁছেছে।”
এই কর্মসূচিতে বিনিয়োগকারীরা চারটি মূল দাবি উত্থাপন করেন:
১. অবিলম্বে বিএসইসি চেয়ারম্যানের অপসারণ
২. গত ১৫ বছরে বিতর্কিত আইপিও ইস্যুকারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও ব্যবস্থা
৩. বাজার স্থিতিশীল রাখতে কার্যকর ও দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ
৪. ভবিষ্যৎ নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় বিনিয়োগকারীদের সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ
বিনিয়োগকারীরা আরও জানান, আগামী ১১ মে প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, সেখানে বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি এবং মতামত রাখার সুযোগ অবশ্যই থাকতে হবে। তাদের বক্তব্য, “আমাদের ছাড়া নেওয়া কোনো সিদ্ধান্তই বাস্তবসম্মত বা কার্যকর হবে না।”
তারা হুঁশিয়ার করে বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে আমরা নিরব ছিলাম, দাবি জানিয়েছি শান্তিপূর্ণভাবে। কিন্তু এবারও যদি কর্তৃপক্ষ কার্যকর সিদ্ধান্ত না নেয়, তাহলে আমরা আরও কঠোর আন্দোলনের দিকে যাব।”
এর আগে ৭ মে বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টরস ইউনিটি কাউন্সিল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ভবনের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে।
সেখানে বক্তারা উল্লেখ করেন, বর্তমান কমিশনের আমলে ডিএসই ইনডেক্স ১১০০ পয়েন্টের বেশি কমেছে এবং দৈনিক লেনদেন নেমে এসেছে মাত্র ৩০০–৪০০ কোটি টাকায়।
তারা জানান, গত আট মাসে বাজার মূলধন থেকে অন্তত ৬৭ হাজার কোটি টাকা হারিয়ে গেছে, ফলে লক্ষাধিক বিনিয়োগকারী পথে বসেছেন।
সারাংশে, কাফন পরে রাজপথে শুয়ে পড়া এই প্রতিবাদ শুধু প্রতীকী নয়—এটি বিনিয়োগকারীদের অস্তিত্ব সংকট, আস্থার ভাঙন এবং নীতিনির্ধারকদের প্রতি এক চূড়ান্ত বার্তা।