facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২০ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪

Walton

ধনী হওয়ার জন্য স্মার্ট লাগে না


০৪ মার্চ ২০২৩ শনিবার, ০৪:৪৫  পিএম

ডেস্ক রিপোর্ট

শেয়ার বিজনেস24.কম


ধনী হওয়ার জন্য স্মার্ট লাগে না

"যদি তুমি স্মার্ট হও, তাহলে তুমি ধনী কেন নও?"

বহুদিন ধরেই অ্যাকাডেমিশিয়ান, বিশেষ করে অর্থনীতি বিশেষজ্ঞদের প্রতি এ ধরনের মন্তব্য করে আসছেন ধনী ব্যবসায়ীরা। চিন্তার উদ্রেক করার মতো প্রশ্ন এটি। তবে প্রশ্ন এসেই যায়, বুদ্ধিমত্তার সাথে স্মার্টনেসের সম্পর্ক ঠিক কতটুকু? শুধু আইকিউকেই যদি স্মার্টনেস ধরা হয়, তবে কি অন্যান্য সামাজিক দক্ষতা বাদ পড়ে যাবে? এবং বাস্তবেও একই ধরনের ফলাফল দেখা যায়, বিশেষ ধরনের বুদ্ধিমত্তা পরিমাপ করার স্কেল আইকিউয়ের সাথে আয়ের খুব জোরালো সংযোগ পাওয়া যায়নি।

সুইডেনের বড় বড় কোম্পানির সিইওদের আইকিউয়ের ওপর করা এক গবেষণায় দেখা যায়, তারা র‍্যাংকিংয়ের দিক থেকে গড়ে ৮৩ পার্সেন্টাইল অবস্থানে (সমগ্র জনসংখ্যাকে ১০০ ভাগে ভাগ করলে এবং শীর্ষ ব্যক্তিরা ১০০তম অবস্থানে থাকলে ৮৩ তম স্তর) রয়েছেন। ছোট কোম্পানির সিইওদের ক্ষেত্রে এই র‍্যাংকিং আরও পেছনে, ৬৬ পার্সেন্টাইলে।

অনেক সিইও যে কেবল বুদ্ধিমত্তার জোরে এত ওপরে পৌঁছেছেন এমন নয়, বরং এর সাথে কঠোর পরিশ্রম, ক্যারিশমাসহ অন্যান্য সামাজিক দক্ষতাও জড়িত, সাথে ভাগ্যও জড়িয়ে আছে খানিকটা।

যদি পরিসংখ্যানের আরো গভীরে গিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়, তবে আইকিউ-এর সাথে আয়ের একটি ইতিবাচক সম্পর্ক দেখা গেলেও সেটি খুব জোরালো প্রমাণ নয়। একটি গবেষণায় দেখা যায় যে আইকিউ-এর ২৫ পার্সেন্টাইল এবং ৭৫ পার্সেন্টাইলে থাকা ব্যক্তিদের গড় আয়ের পার্থক্য মাত্র ১০% থেকে ১৬%। অর্থাৎ, আইকিউ-এর স্তরের দিক থেকে ৫০ ধাপ এগিয়ে থাকলেও আয়ের দিক থেকে মাত্র ১০ থেকে ১৬ ধাপ এগিয়ে রয়েছে ব্যক্তিরা।

আইকিউ বাড়লে হয়তো কিছুটা অর্থনৈতিক সাফল্য পাওয়া যাবে, কিন্তু তা একেবারে সম্পূর্ণ ভিন্ন আর্থসামাজিক শ্রেণিতে কাউকে পৌঁছে দেবে না।

সুইডেনের ডেটার ওপর ভিত্তি করে আরেকটি গবেষণা থেকে দুটি উল্লেখযোগ্য ফলাফল দেখা যায়। প্রতি বছর ৬০ হাজার ইউরোর বেশি আয় করা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে আইকিউ এবং আয়ের ধারায় কোনো প্যাটার্ন দেখা যায় না। দ্বিতীয়ত, সবচেয়ে বেশি আয় করা ১% ব্যক্তিদের আইকিউ ঠিক তাদের নিচে অবস্থান করা ব্যক্তিদের তুলনায় কম।

কেন এ ধরনের ফলাফল বের হয়েছে তা বলা কঠিন। তবে একটি সম্ভাবনা হলো যে, সবচেয়ে স্মার্ট ব্যক্তিরা সারাক্ষণ কাজের তুলনায় একটি ভারসাম্যপূর্ণ জীবন চান, তাদের জীবন দর্শন আলাদা। তাদের কাছে সামাজিক স্ট্যাটাস গুরুত্ব বহন করে, যে কারণে তারা বেশি আয়ের কম মর্যাদাপূর্ণ চাকরির চেয়ে কম আয়ের বেশি মর্যাদাপূর্ণ চাকরি পছন্দ করেন।

তাদের কাছে টাকাই একমাত্র বিষয় নয়। খুব বেশি টাকা থাকার ফলে বন্ধু এবং আত্মীয়-স্বজনের সাথে সম্পর্ক রাখা কঠিন হয়ে ওঠে, প্রচুর সুবিধাভোগীরা হানা দেয়। এ কারণে তারা দুটোর মধ্যে ভারসাম্য রাখতে চান।

আইকিউ এবং আয়ের এই পার্থক্যের আরেকটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে ভাগ্য, বিশেষ করে যখন অর্থের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। বেশিরভাগ বিনিয়োগের ক্ষেত্রেই একটি ঝুঁকি থেকে যায়। অর্থাৎ, যখন কেউ বড় অর্থ বিনিয়োগ করতে চান, তখন ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। যখন ঝুঁকি আর ভাগ্যকে হিসাবে আনা হয়, তখন সমান দক্ষতা এবং বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন দুইজন ব্যক্তির ফলাফল সম্পূর্ণ ভিন্ন হতে পারে।

তবে ব্যবসায়ী এবং বিনিয়োগকারীদের ভাগ্য প্রসন্ন বলেও তারা এতদূর আসতে পেরেছেন বলে তাদের অর্জনকে খাটো করা হচ্ছে না। ভাগ্যকে অতিরিক্ত ৫ বিলিয়ন ডলার সম্পদে রূপান্তর করার জন্য প্রচুর দক্ষতা প্রয়োজন।

ধরা যাক, একজন ব্যক্তির ১ বিলিয়ন ডলার এবং আরেকজন ব্যক্তির ৬ বিলিয়ন ডলার রয়েছে। যার কাছে ৬ বিলিয়ন ডলার রয়েছে, তার বুদ্ধিমত্তা ১ বিলিয়ন ডলারের মালিকের তুলনায় বেশি, এমন হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

প্রধানত নর্ডিক দেশগুলোই আইকিউ-এর ডেটা সংগ্রহ করে। অন্যান্য দেশে আইকিউ-এর সম্পূর্ণ ডেটা না পাওয়ায় সেটি বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয় না। তারপরেও অসম্পূর্ণ ডেটা থেকে দেখা যায় যে, সব দেশের ক্ষেত্রে আইকিউ এবং আয়ের চিত্র একরকম নয়।

ফিনল্যান্ডের ক্ষেত্রে আইকিউ-এর দিক থেকে ৯৯ পার্সেন্টাইলের ব্যক্তিদের গড় আয় ৭০ পার্সেন্টাইলে নেমে আসে।

এ সব গবেষণার ফলাফল থেকে একটি জিনিস স্পষ্ট: আপনি যদি আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য সেরা ব্যক্তিকে নিয়োগ দিতে চান, তবে সে কতটুকু স্মার্ট শুধু সেদিকে নজর দিলেই হবে না। এটি প্রায়ই অনেকে ভুল করে থাকেন, বিশেষ করে স্মার্ট ব্যক্তিরা তাদের মতো স্মার্ট ব্যক্তিদেরকেই নিয়োগ করার চেষ্টা করেন।

তবে একজন মানুষের সবচেয়ে বড় দক্ষতা সম্ভবত তার কতগুলো দক্ষতা রয়েছে এবং মানুষটার মধ্যে সেই দক্ষতাগুলোকে একত্রিত করতে পারার ক্ষমতা কতটুকু- সেটি।

লেব্রন জেমসের মতো একজন অ্যাথলেটকেই ধরা যাক। লেব্রন জেমস এনবিএর সবচেয়ে দ্রুত খেলোয়াড় নন, সবচেয়ে সেরা শ্যুটার, ডিফেন্ডার কিংবা রিবাউন্ডারও নন। তবে তার সবগুলো দক্ষতাকে একসাথে কাজে লাগিয়ে সবার সেরা হওয়ার সামর্থ্য তার মধ্যে ছিল। যে কারণে তিনি লীগের সেরা খেলোয়াড় তথা বাস্কেটবল ইতিহাসের একজন কিংবদন্তি হয়ে উঠেছেন, সাথে একজন সেরা দলনেতাও বটে।

লেব্রন জেমস অবশ্যই ব্যতিক্রম। তবে তার উদাহরণ থেকে শিক্ষা নেওয়াই যায়।

যখন নিজের ভবিষ্যতের কথা ভাবছেন, তখন খুব বেশি চিন্তা করার দরকার নেই, কোন সীমাবদ্ধতা নিয়ে হতাশ হওয়া কিংবা কোনো অর্জন নিয়ে বেশি সন্তুষ্ট হওয়ার দরকার নেই। এরচেয়ে কীভাবে সবগুলো দক্ষতাকে একসাথে কাজে লাগানো যায়, সেদিকে নজর দেওয়া জরুরি।

সূত্র: ব্লুমবার্গ

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন:

বিশেষ প্রতিবেদন -এর সর্বশেষ