
সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে ব্যবহৃত প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন থেকে পুলিশের হাতে আর থাকবে না চায়নিজ রাইফেল, সাব মেশিনগান বা ৯ এমএম পিস্তলের মতো মারণাস্ত্র। এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, এ ধরনের অস্ত্র রাখা হবে শুধু আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) কাছে।
আজ সোমবার আইনশৃঙ্খলা–সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের নবম সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। তিনি বলেন, “পুলিশের হাতে মারণাস্ত্র থাকার প্রয়োজন নেই। অভিযানে গেলে তাদের এসব অস্ত্র লাগবে না।”
পুলিশকে অস্ত্র জমা দিতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তবে এই সিদ্ধান্ত কবে থেকে বাস্তবায়ন হবে, তা নির্দিষ্ট করেননি। উপদেষ্টা বলেন, “আজ কেবল সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাস্তবায়নে কিছুটা সময় লাগবে।”
ডিসিদের সুপারিশ ও জনআবেগের প্রতিফলন
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান এবং পরবর্তী সময়ে পুলিশের হাতে প্রাণঘাতী অস্ত্র না রাখার দাবি ব্যাপকভাবে উঠে আসে। চলতি বছরের ডিসি সম্মেলনেও কয়েকজন জেলা প্রশাসক এ ধরনের অস্ত্র অপসারণের সুপারিশ করেছিলেন। সরকারের সাম্প্রতিক এই সিদ্ধান্ত সেই দাবিগুলোরই একটি ফলাফল।
র্যাব পুনর্গঠনের উদ্যোগ
বৈঠকে র্যাব (র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন) পুনর্গঠন নিয়েও আলোচনা হয়। উপদেষ্টা জানান, র্যাবের বর্তমান নাম ও পোশাক থাকবে কি না, সংগঠনটির কাঠামো কেমন হবে—এসব বিষয়ে একটি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজের নেতৃত্বে গঠিত এ কমিটিতে থাকবে ৫ থেকে ৬ সদস্য, যাদের মধ্যে বিভিন্ন বাহিনীর প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
পোশাকশ্রমিকদের বেতন ও ঈদে নিরাপত্তা
আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে বৈঠকে আলোচনা হয় পোশাকশ্রমিকদের বেতন নিয়েও। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “শ্রমিকদের বৈধ দাবি অবশ্যই মেনে নিতে হবে। তবে কেউ যদি অবৈধ দাবি নিয়ে আন্দোলনে নামে, তা বরদাশত করা হবে না।”
ঈদের কোরবানির হাটে নিরাপত্তা জোরদার করতে রাজধানীর প্রতিটি হাটে ১০০ জন করে আনসার মোতায়েনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হাইওয়ে পুলিশও সক্রিয় থাকবে যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে ও চাঁদাবাজি ঠেকাতে।
ভারতের ‘পুশইন’ ইস্যুতে উদ্বেগ
আজকের বৈঠকে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হয় ভারতের ‘পুশইন’ ইস্যু। বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান জানান, ৭ ও ৮ মে তারিখে বিএসএফ ২০২ জনকে জোরপূর্বক বাংলাদেশে পাঠিয়েছে। এসব মানুষদের বেশিরভাগই আগে ভারতে গিয়েছিল এবং অনেকেই সেখানে আধার কার্ডসহ বিভিন্ন পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেছে। তাদের যাচাই-বাছাই শেষে নিজ নিজ স্থায়ী ঠিকানায় পাঠানো হচ্ছে।
পুশইনকৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ৩৯ জন রোহিঙ্গা রয়েছে, যাদের মধ্যে ৫ জনের কাছে ভারতের ইউএনএইচসিআর-এর কার্ড রয়েছে। বিজিবি জানায়, এ ঘটনায় মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে এবং ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
পুলিশের মারণাস্ত্র প্রত্যাহার, র্যাব পুনর্গঠন এবং সীমান্তে ভারতীয় পুশইন বন্ধে সরকারের সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলো দেশে নিরাপত্তা ও মানবাধিকার পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।