
ভারত ও পাকিস্তান ফের একবার যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছিল। চার দিনব্যাপী এই সংঘর্ষ ছিল অস্বাভাবিকভাবে জটিল ও আধুনিক। দুই দেশের আকাশপথে এবার সংঘাতের ধরন ছিল নজিরবিহীন। শত শত অস্ত্রসজ্জিত ড্রোন এবং আধুনিক যুদ্ধবিমান দিয়ে হামলা ও পাল্টা হামলা চালানো হয় কাশ্মীর সীমান্তে।
এই প্রথম নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর উভয়পক্ষই বড় পরিসরে ড্রোন ব্যবহার করে—যা নজরদারি ও নিশানাভেদে ব্যবহৃত হয় পাইলট ছাড়াই। এরপর এসব ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র সীমান্ত পার হয়ে সরাসরি ভারত ও পাকিস্তানের অভ্যন্তরের সামরিক স্থাপনাগুলোর ওপর আঘাত হানে।
সংঘাত যখন চরমে পৌঁছায়, তখন কূটনৈতিক মহলে তৎপরতা শুরু হয়। তবে অতীতের তুলনায় এবার বৈশ্বিক কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া ছিল অনেক দুর্বল। আন্তর্জাতিক নেতৃত্বের অনীহা ও দায়িত্বহীনতা সংঘাতকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে।
ভারতীয় বিশ্লেষক শ্রীনাথ রাঘবনের মতে, দুই দেশের অস্ত্রনির্ভরতা এতটাই বিদেশনির্ভর যে, অনেক সময় বাইরের চাপ কার্যকর হয়। তবে এবার পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন। ভারত আগের চেয়ে অনেক কঠোর মনোভাব দেখিয়েছে। তাদের অবস্থান ছিল এমন, যেন পাকিস্তানকে শক্ত জবাব না দিয়ে ছাড় দেওয়া হবে না।
অন্যদিকে পাকিস্তান পরিচালিত হচ্ছে সামরিক কর্তৃত্বে, যেখানে জেনারেল নেতৃত্ব দিচ্ছেন এক কট্টরপন্থী শাসনব্যবস্থাকে। ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার মুখোশ এখন অনেকটাই হিন্দু জাতীয়তাবাদে আচ্ছন্ন, যা দুই দেশের মধ্যে আপসহীন মনোভাব গড়ে তুলেছে।
ঘটনার সূত্রপাত ২২ এপ্রিল পেহেলগামে এক সন্ত্রাসী হামলা থেকে, যেখানে ২৬ জন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হন। ভারত অভিযোগ করে, পাকিস্তান এর পেছনে রয়েছে। পাকিস্তান অবশ্য তা অস্বীকার করেছে। এই হামলার পর ছয় বছর শান্তিপূর্ণ সম্পর্কের ইতি ঘটে।
২০১৬ ও ২০১৯ সালের মতো এবারও ভারত চেয়েছে দ্রুত সামরিক জবাব দিতে। তবে চীন ও রাশিয়া সংক্রান্ত চাপে ভারতের প্রতিক্রিয়া ছিল সীমিত। তবু তারা নতুন প্রজন্মের অস্ত্র দিয়ে নিজেদের শক্তি জানান দেয়।
এবারের হামলায় ভারত শত্রু ভূখণ্ডের গভীরে ঢুকে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে, যা গত দশকে দেখা যায়নি। প্রতিদিনের বিবৃতিতে উভয়পক্ষই নিজেদের সফল দাবি করলেও, সীমান্তজুড়ে গোলাগুলি ও হামলা বেড়েই চলছিল।
ড্রোন ও বিমান হামলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় উভয় দেশের কৌশলগত স্থাপনাগুলোর। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরবসহ উপসাগরীয় দেশগুলোর কূটনৈতিক চাপে অবশেষে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসে।
তবে যুদ্ধবিরতির আগ মুহূর্তে ভারত ইঙ্গিত দেয়, ভবিষ্যতে যদি আবার হামলা হয়, তাহলে প্রতিক্রিয়াও হবে আগের চেয়েও ভয়াবহ। সাবেক সেনাপ্রধান বেদ প্রকাশ মালিক বলেন, আদৌ কোনো রাজনৈতিক লাভ হয়েছে কি না—তা সময়ই বলবে।
এই সাম্প্রতিক সংঘাত আবারও প্রমাণ করল, পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা যে কোনো মুহূর্তে বিস্ফোরণে রূপ নিতে পারে। এবং তা প্রতিবারই কেবল কূটনীতি দিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব নাও হতে পারে।