ঢাকা   মঙ্গলবার ১৩ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

বিয়ের সময় বাবা-মায়ের জন্য মহানবী (সা.)-এর ৫ অমূল্য নির্দেশনা

বিয়ের সময় বাবা-মায়ের জন্য মহানবী (সা.)-এর ৫ অমূল্য নির্দেশনা

 

ইসলাম জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ভারসাম্য ও সৌন্দর্য প্রতিষ্ঠা করেছে—বিয়ের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নয়। বিয়ের সিদ্ধান্ত যেন কেবল আবেগ বা বাহ্যিক মোহে না হয়, সে জন্য ইসলাম দ্বীনদারি ও চরিত্রকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। কারণ, বয়স বা অভিজ্ঞতার অভাবে ছেলে-মেয়েরা অনেক সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয়। সেখানেই অভিভাবকের দায়িত্ব শুরু হয়—তাদের সঠিক পথনির্দেশ দেওয়া, যোগ্য জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করা। এ প্রসঙ্গে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, "তোমরা যদি এমন কোনো পাত্র পাও যার দ্বীনদারি ও চরিত্রে সন্তুষ্ট, তবে তার সঙ্গে বিয়ে দাও। তা না করলে পৃথিবীতে ফিতনা ও বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দেবে।" (তিরমিজি, হাদিস: ১০৮৪)

১. পাত্র নির্বাচনে আল্লাহভীতি

কন্যার বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম ও প্রধান বিষয়—পাত্রের চরিত্র ও দ্বীনদারি। শুধু আর্থিক অবস্থা বা সামাজিক অবস্থান নয়, বরং একজন ভালো মুসলিম, আল্লাহভীরু, সচ্চরিত্র মানুষকে মেয়ের জীবনসঙ্গী হিসেবে নির্বাচন করা জরুরি। ইমাম শাবি (রহ.) বলেন, "যে ব্যক্তি তার দ্বীনদার কন্যাকে কোনো পাপাচারীর সঙ্গে বিয়ে দেয়, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করল।"

২. কোমল হৃদয়ের পাত্র নির্বাচন

বিয়ের সিদ্ধান্ত শুধু ধর্মীয় অনুশাসন নয়, একান্ত মানবিক বিচারবোধেরও বিষয়। একজন কোমল হৃদয়ের মানুষই কন্যার প্রতি ভালোবাসা, সম্মান ও সহানুভূতির আচরণ করতে পারে। হাসান বসরি (রহ.)-এর ভাষায়, “যার মধ্যে আল্লাহভীতি আছে এবং যে রাগের সময়ও স্ত্রীর ওপর জুলুম করে না—সেই উত্তম পাত্র।”

৩. মেয়ের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া

ইসলামে মেয়েদের মতামত উপেক্ষা করা নিষেধ। যদি মেয়ে এমন কাউকে পছন্দ করে যার মধ্যে দ্বীন, বংশ, চরিত্র ও সামর্থ্য রয়েছে, তবে অভিভাবকের উচিত সেই পাত্রকে গ্রহণ করা। ইসলামী ফিকহের অন্যতম রেফারেন্স ‘মাজমুউল ফাতাওয়া’তে বলা হয়—“অভিভাবকরা মেয়ের পছন্দ উপেক্ষা করে অপছন্দের কাউকে চাপিয়ে দিলে তা জুলুমের শামিল।”

৪. নিজের স্বার্থে নয়, সন্তানের কল্যাণে সিদ্ধান্ত

অনেক অভিভাবক কন্যাকে বিয়ে দেন অর্থ, ক্ষমতা বা পারিবারিক স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে। কিন্তু ইসলাম স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছে, এই ধরনের সিদ্ধান্ত অন্যায়ের শামিল। আল্লামা ইবনে তাইমিয়া বলেন, “যে ব্যক্তি নিজের স্বার্থে মেয়েকে জোর করে অপছন্দের পাত্রের সঙ্গে বিয়ে দেয়, সে জালেম।”

৫. যোগ্য পাত্র পেলে আগে থেকেই প্রস্তাব দেওয়া

ইসলামে কন্যার অভিভাবক নিজেও যোগ্য পাত্রকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে পারেন। এতে সম্মানহানির কিছু নেই, বরং তা নবীজির সুন্নাহ। যেমন—হজরত উমর (রা.) তাঁর কন্যা হাফসা (রা.)-কে রাসুল (সা.)-এর কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেন। ইসলামের দৃষ্টিতে এমন উদ্যোগ প্রশংসনীয় ও প্রজ্ঞার পরিচয়।

কন্যাসন্তান: একটি মহান আমানত

সন্তান, বিশেষ করে কন্যাসন্তান, অভিভাবকের জন্য একটি পবিত্র আমানত। তারা সবসময় নিজের পছন্দ প্রকাশে স্পষ্ট নয়, অভিভাবকের ওপর নির্ভরশীল। তাই আল্লাহ বলেন, “তোমাদের প্রতি নির্দেশ, তোমরা আমানত তার হকদারকে ফিরিয়ে দেবে।" (সুরা নিসা: ৫৮)

তাই আসুন, বিয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমরা নিজের স্বার্থ নয়, সন্তানদের ভবিষ্যৎ, নিরাপত্তা ও দীনদার জীবনসঙ্গীর কথা বিবেচনা করি। ইসলাম যা বলে দিয়েছে, তাতেই আছে শান্তি, কল্যাণ এবং সফলতা।
আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে দায়িত্বশীল অভিভাবক হওয়ার তাওফিক দেন। আমিন।