
মেয়াদ শেষের দেড় বছর আগেই ২০০৮ সালে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তারেক রহমানের পাসপোর্ট লন্ডন থেকে নবায়ন করা হয়েছিল পরারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। সম্প্রতি হাই কোর্টে দাখিল করা এক প্রতিবেদনে এতথ্য জানানো হয়। অন্যদিকে তার নামে চারটি পাসপোর্ট হওয়ার ব্যাখ্যায় পুলিশের আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তারেক রহমান একই মেয়াদে একাধিক পাসপোর্ট রাখেননি। পাসপোর্টের বৈধ মেয়াদের মধ্যে পাসপোর্টের পাতা শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে নীতিমালা অনুসারে তার বরাবরে নতুন পাসপোর্ট দেওয়া হয়েছিল। বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের হাই কোর্টে বেঞ্চে এসব প্রতিবেদন দাখিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। রোববার আদালত বিষয়টি শুনানির জন্য প্রস্তুত করতে সংশ্লিষ্ট শাখাকে নির্দেশ দিয়েছে। এ বছরের শুরুতে এক আইনজীবীর করা রিট আবেদনে হাই কোর্ট বিভিন্ন মামলা মাথায় নিয়ে সাত বছর ধরে লন্ডনে অবস্থানরত তারেকের পাসপোর্টের বিষয়ে দুটি প্রতিবেদন দিতে আদেশ দিয়েছিল পররাষ্ট্র সচিব ও আইজিপিকে। ওই প্রতিবেদন দাখিলের পর গত ২৩ জুন আদালত মেয়াদ শেষের আগেই তারেকের পাসপোর্ট লন্ডন থেকে কীভাবে নবায়ন করা হয়েছিল এবং তা আইন অনুযায়ী হয়েছিল কি না, তা জানাতে পররাষ্ট্র সচিবকে এবং কয়েক বছরের ব্যবধানে এক ব্যক্তির নামে একাধিক পাসপোর্ট কীভাবে ইস্যু করা হয়েছে, পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে পুলিশের মহাপরির্শকের মাধ্যমে তা জানাতে বলে আদালত। ওই আদেশে গত ৫ অগাস্ট এসব প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস। রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সানজিদা খানম। তাপস বিশ্বাস বলেন, পররাষ্ট্র সচিব ও পুলিশের মহাপরিদর্শকের দুটি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়েছে। “রোববার আদালত রুল শুনানির জন্য প্রস্তুত করতে শাখাকে নির্দেশ দিয়েছে, এখন শুনানি শুরু হবে,” বলেন সানজিদা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে দেখা যায়, লন্ডনে বাংলাদেশ হাই কমিশনের তিন কর্মকর্তা তারেকের পাসপোর্ট নবায়নে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের (তৎকালীন স্বরাষ্ট্র সচিব) নির্দেশনা পেয়ে পদক্ষেপ নেন। ওই সময় বাংলাদেশে ক্ষমতায় ছিল ফখরুদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার। সেনা নিয়ন্ত্রিত ওই সরকার আমলে ২০০৭ সালে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক। পরের বছর তিনি জামিনে মুক্তি নিয়ে চিকিৎসার জন্য সপরিবারে যুক্তরাজ্যে যান। এরপর না ফেরার মধ্যে ২১ অগাস্টের গ্রেনেড হামলার মামলায় হুলিয়া জারি হয় তার বিরুদ্ধে। প্রতিবেদনে বলা হয়, “২০০৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর তারেক রহমানের নামে স্বল্পমেয়াদের পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়, যার মেয়াদ ছিল ২০১০ সালের ৩ জুন পর্যন্ত। ... পরে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র সচিবের অনুরোধে পাচ বছরের জন্য তারেকের পাসপোর্টের মেয়াদ ২০১৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়।” লন্ডন যাওয়ার পর তারেক ২০০৮ সালেই সর্বশেষ পাসপোর্ট নবায়ন করেছিলেন বলে অনুসন্ধানে জানা যায়। তার মেয়াদ ২০১৩ সালে শেষ হয়েছে। তিনি এখন শরণার্থী হিসেবে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন বলে ঢাকা ও লন্ডনের সূত্রগুলো বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নিশ্চিত করেছে।