ঢাকা   সোমবার ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

নতুন অধ্যাদেশ: দেউলিয়া ব্যাংকে সরকারের হস্তক্ষেপের পথ উন্মুক্ত

কর্পোরেট

শেয়ারবিজনেস ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৬:৩১, ১১ মে ২০২৫

সর্বশেষ

নতুন অধ্যাদেশ: দেউলিয়া ব্যাংকে সরকারের হস্তক্ষেপের পথ উন্মুক্ত

দেউলিয়া বা সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোর ওপর কড়া নজরদারি এবং প্রয়োজন হলে সাময়িকভাবে সরকারি মালিকানায় নেওয়ার বিধান রেখে নতুন একটি অধ্যাদেশ জারি করেছে সরকার। ‘ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ, ২০২৫’ শিরোনামে ৬৭ পৃষ্ঠার এ গেজেট ছুটির দিন শুক্রবার প্রকাশ করা হয়, যেখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে—বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকার যৌথভাবে ইসলামি ধারাসহ যেকোনো তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে সাময়িকভাবে সরকারি মালিকানায় নিতে পারবে। এর জন্য সরকারি মালিকানাধীন কোনো কোম্পানির কাছে শেয়ার হস্তান্তরের আদেশ দিতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, ব্যাংকের মালিক পক্ষ যদি ব্যাংকের সম্পদ বা তহবিল অপব্যবহার করে কিংবা অন্যের স্বার্থে প্রতারণামূলকভাবে ব্যবহার করে, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক রেজল্যুশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারবে। এর আওতায় দুর্বল ব্যাংকে অস্থায়ী প্রশাসক নিয়োগ, মূলধন পুনর্গঠন, শেয়ার বা সম্পদ হস্তান্তরের সুযোগ এবং বিদ্যমান বা নতুন শেয়ারধারীদের মাধ্যমে ব্যাংকের আর্থিক ভিত্তি শক্তিশালী করার বিধান রয়েছে।

প্রয়োজন হলে বাংলাদেশ ব্যাংক ‘ব্রিজ ব্যাংক’ গঠন করে সেই ব্যাংকের কার্যক্রম সাময়িকভাবে চালু রাখতে পারবে এবং পরবর্তীতে তা তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করাও যাবে। এই ব্রিজ ব্যাংক হবে এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যা দুর্বল বা দেউলিয়া ব্যাংকের ব্যবসা পরিচালনায় অস্থায়ী ভূমিকা পালন করবে।

এছাড়া অধ্যাদেশে ব্যাংক খাতে কার্যকর সংকট ব্যবস্থাপনার জন্য সাত সদস্যের একটি ‘ব্যাংক খাত সংকট ব্যবস্থাপনা কাউন্সিল’ গঠনের কথা বলা হয়েছে। এই কাউন্সিল প্রতি তিন মাসে বৈঠক করে সংকট নিরসনের কৌশল নির্ধারণ করবে। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ছাড়াও সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা সদস্য থাকবেন।

ব্যাংক লাইসেন্স বাতিল হলে বাংলাদেশ ব্যাংক আদালতের মাধ্যমে অবসায়ন প্রক্রিয়া শুরু করবে। অবসায়নের সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে ব্যাংকের দায়ের ওপর কোনো সুদ বা মাশুল কার্যকর থাকবে না। তবে ব্যাংক স্বেচ্ছায়ও অবসায়নের সিদ্ধান্ত নিতে পারবে, অবশ্যই বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন সাপেক্ষে। লাইসেন্স প্রত্যাহারের সাত কর্মদিবসের মধ্যে আমানত ও দুই মাসের মধ্যে অন্যান্য দায় শোধ করতে হবে।

অধ্যাদেশ অনুযায়ী, ব্যাংক ব্যর্থতার পেছনে যেসব ব্যক্তির দায়িত্ব রয়েছে, তাঁদেরকে ব্যক্তিগতভাবে দায়ী করা হবে। নিয়ম লঙ্ঘনকারীদের জন্য সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা জরিমানা এবং প্রতিদিনের বিলম্বে ৫ হাজার টাকা হারে অতিরিক্ত জরিমানা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এদিকে, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)-এর চেয়ারম্যান আবদুল হাই সরকার বলেছেন, অধ্যাদেশটি পর্যালোচনা করে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে। তিনি মনে করেন, সব বেসরকারি ব্যাংককে এক পাল্লায় মাপা উচিত নয় এবং আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

এই অধ্যাদেশ ব্যাংক খাতে দীর্ঘমেয়াদি শৃঙ্খলা আনতে পারবে কি না, এখন সেদিকেই নজর সকলের।

 

সর্বশেষ