ঢাকা   মঙ্গলবার ১০ জুন ২০২৫, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সন্তান নয়, মাতৃত্ব বেছে নিয়েছেন তিনি: অবিবাহিত সামশাদ সুলতানার সাহসী নিঃশব্দ বিপ্লব

নারী ও নারী উদ্যোক্তা

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৩৭, ৯ জুন ২০২৫

সন্তান নয়, মাতৃত্ব বেছে নিয়েছেন তিনি: অবিবাহিত সামশাদ সুলতানার সাহসী নিঃশব্দ বিপ্লব

বাংলাদেশের সমাজে একজন অবিবাহিত নারীর জীবন এখনো নানা সীমাবদ্ধতা, প্রশ্ন ও কুসংস্কারের বেড়াজালে আটকে আছে। কিন্তু সেই কঠিন গণ্ডি ভেঙে সাহসিকতার সঙ্গে সামনে এগিয়ে গেছেন সামশাদ সুলতানা খানম। বিয়ে না করেও তিনি হয়েছেন একজন সন্তানের মা—ভালোবাসা, দায়িত্ব ও মানবিকতার ভিত্তিতে। তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, মায়ের পরিচয় রক্তে নয়, জন্ম নয়—বরং হৃদয়ে গড়ে ওঠে।

সামশাদের সিদ্ধান্ত অনেকের চোখে ‘অসাধারণ’, আবার অনেকের কাছে সমাজবিরোধী। কিন্তু তিনি মনে করেন, এটি একান্তই মানবিক দায়িত্ব। তার কাছে মাতৃত্ব মানে কেবল জৈবিক সম্পর্ক নয়, বরং স্নেহ, সুরক্ষা আর মমতায় গড়ে ওঠা একটি নির্ভরতার জগৎ। সমাজের অনাথ, অবহেলিত শিশুদের জন্য তিনি নিজেকে উৎসর্গ করে বুঝিয়ে দিয়েছেন, একক নারীও হতে পারেন একজন পূর্ণ অভিভাবক।

আইনত অনেকেই মনে করেন, অবিবাহিত নারীদের পক্ষে সন্তান দত্তক নেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু বাস্তবে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া ও যাচাইয়ের মধ্য দিয়ে একজন একক নারীও অভিভাবকত্বের আইনি স্বীকৃতি পেতে পারেন। সামশাদ সেই পথ পেরিয়েই হয়ে উঠেছেন এক শিশুর নির্ভরতার প্রতীক। কর্মব্যস্ত জীবন, একক অবস্থা—সব কিছুকে পেছনে ফেলে তিনি যে মাতৃত্ব গ্রহণ করেছেন, তা নিঃসন্দেহে এক নিঃশব্দ বিপ্লব।

তার এই দৃষ্টান্ত সমাজের জন্য একটি শক্ত বার্তা—শুধু নিজের সন্তান নয়, অবহেলিত শিশুর জীবন গড়ে তোলাও হতে পারে এক মহান দায়িত্ব। যদি বাংলাদেশের প্রতিটি পরিবার কিংবা সামর্থ্যবান ব্যক্তি এমন একজন শিশুর দায়িত্ব নেন, তবে সমাজে আর কোনো শিশুকে অসহায়ভাবে বেড়ে উঠতে হবে না। অপরাধ, হতাশা ও অনিশ্চয়তার ভবিষ্যৎ নয়—তারা পাবে ভালোবাসা, আশ্রয় ও সম্ভাবনার পথ।

সামশাদের গল্প কেবল একজন নারীর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নয়, এটি একটি সামাজিক দর্শন। যেখানে নারী মানেই শুধু সংসার নয়, নারী মানেই কেবল সন্তানের জন্মদাত্রী নয়—নারী মানেই ভালোবাসার হাত বাড়ানো একজন নির্মাতা। তিনি পথ দেখাচ্ছেন অন্য নারীদের, যাঁরা হয়তো একইভাবে ভাবছেন কিন্তু সাহস পাচ্ছেন না।

আজকের বাংলাদেশে সামশাদের মতো আরও সাহসী নারীর প্রয়োজন, যারা ‘মা’ শব্দটিকে রক্তের বাইরেও মানবতার গভীরতায় অনুভব করতে জানেন। তিনি আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন—ভালোবাসা দিয়ে তৈরি সম্পর্কই সবচেয়ে গভীর, সবচেয়ে মানবিক।