ঢাকা   শুক্রবার ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

কার্যক্রম বন্ধ পুঁজিবাজারের আট কোম্পানির আর্থিক চিত্র কি?

শেয়ারবাজার

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ১১:২৭, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩

আপডেট: ১৪:১৯, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩

কার্যক্রম বন্ধ পুঁজিবাজারের আট কোম্পানির আর্থিক চিত্র কি?

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের ফ্যামিলিটেক্স (বিডি) লিমিটেড ও বিবিধ খাতের উসমানিয়া গ্লাস শিট ফ্যাক্টরি লিমিটেডের পরিচালন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। একই সঙ্গে আরো ছয় কোম্পানির কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

২৭ সেপ্টেম্বর বুধবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কর্মকর্তারা ফ্যামিলিটেক্স ও উসমানিয়া গ্লাসের কারখানা পরিদর্শনে গিয়ে কার্যক্রম বন্ধ দেখতে পান। এ তথ্য জানিয়েছে ডিএসই।

সিকিউরিটিজ আইনানুসারে কারখানা কার্যক্রম বন্ধ থাকলে ওই তথ্য বিনিয়োগকারীদের জানানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যদিও স্টক এক্সচেঞ্জকে এ-সংক্রান্ত কোনো তথ্য জানায়নি ফ্যামিলিটেক্স ও উসমানিয়া গ্লাস। সম্প্রতি তালিকাভুক্ত বিভিন্ন কোম্পানির সার্বিক অবস্থা পরিদর্শনের উদ্যোগ নিয়েছে ডিএসই। এরই ধারাবাহিকতায় এক্সচেঞ্জটির কর্মকর্তারা বিভিন্ন কোম্পানির কারখানা পরিদর্শন করছেন। এরই মধ্যে ডিএসইর কর্মকর্তারা নর্দার্ন জুট ম্যানুফ্যাকচারিং, দুলামিয়া কটন মিলস ও রিজেন্ট টেক্সটাইল মিলসের কারখানা পরিদর্শনে গিয়েও বন্ধ পেয়েছেন। এছাড়া মেঘনা পেট ও কনডেন্সড মিল্ক ও মেট্রো স্পিনিংয়ের কারখানা বন্ধ রয়েছে।

ফ্যামিলিটেক্স : তথ্যানুসারে, ৩০ জুন সমাপ্ত ২০১৯-২০ হিসাব বছরে সর্বশেষ নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে ফ্যামিলিটেক্স। এর পরের দুই হিসাব বছর অর্থাৎ ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক তথ্য ও ২০২২-২৩ হিসাব বছরের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি কোম্পানিটি। ফলে কোম্পানিটির প্রকৃত আর্থিক ও ব্যবসায়িক তথ্য জানতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা।

৩০ জুন সমাপ্ত ২০২০ হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি ফ্যামিলিটেক্স। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ১৫ পয়সা।

উসমানিয়া গ্লাস: অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২২-২৩ হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জুলাই-মার্চ) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৩ টাকা ২ পয়সা, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ২ টাকা ৩০ পয়সা। গত ৩১ মার্চ শেষে কোম্পানিটির এনএভিপিএস হয়েছে ৮০ টাকা ১৫ পয়সায়।

ডিএসইতে ২৭ সেপ্টেম্বর বুধবার উসমানিয়া গ্লাসের শেয়ারের সর্বশেষ ও সমাপনী দর ছিল যথাক্রমে ৫০ টাকা ৩০ ও ৫০ টাকা ৮০ পয়সা। গত এক বছরে শেয়ারটির সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ দর ছিল যথাক্রমে ৪৮ টাকা ৭০ ও ৭৪ টাকা ৬০ পয়সা।

রিজেন্ট টেক্সটাইল : সর্বশেষ ২০২০-২১ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক তথ্য প্রকাশ করেছে রিজেন্ট টেক্সটাইল মিলস। এর পরের দুই হিসাব বছর অর্থাৎ ২০২১-২২-এর নিরীক্ষিত আর্থিক তথ্য ও ২০২২-২৩ হিসাব বছরের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রকাশ করেনি কোম্পানিটি। ফলে কোম্পানিটির প্রকৃত আর্থিক ও ব্যবসায়িক তথ্য জানতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা।

৩০ জুন সমাপ্ত ২০২১ হিসাব বছরে রিজেন্ট টেক্সটাইলের আয় হয়েছে ১১০ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ৮৬ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট লোকসান হয়েছে ২০ কোটি ৮০ লাখ টাকার বেশি, আগের হিসাব বছরে যা ছিল প্রায় ৪ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির লোকসান বেড়েছে প্রায় ১৭ কোটি টাকা।

ডিএসইতে গত ২৬ সেপ্টেম্বর রিজেন্ট টেক্সটাইল শেয়ারের সমাপনী দর ছিল ৯ টাকা ৮০ পয়সা। গত এক বছরে শেয়ারটির সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ দর ছিল যথাক্রমে ৯ টাকা ৮০ পয়সা ও ১০ টাকা।

৩০ জুন ২০২০ সমাপ্ত হিসাব বছরের জন্য উদ্যোক্তা পরিচালক বাদে অন্য শেয়ারহোল্ডারদের ১ শতাংশ নগদ ও সব ধরনের শেয়ারহোল্ডারকে ১ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দিয়েছে রিজেন্ট টেক্সটাইল।

নর্দান জুট : গত দুই হিসাব বছর অর্থাৎ ২০২১-২২ ও ২০২০-২১ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি নর্দান জুট। পাশাপাশি অনিরীক্ষিত প্রান্তিক প্রতিবেদনও প্রকাশ করছে না কোম্পানিটি। সর্বশেষ ২০১৯-২০ হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিটি। এ হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১১ টাকা ৩৩ পয়সা। ২০১৮-১৯ হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ১০০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল কোম্পানিটি। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ২৩ টাকা ২৯ পয়সা। আগের হিসাব বছরে শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ১৭ টাকা ১৫ পয়সা। ২০১৭-১৮ হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি পাট খাতের স্বল্প মূলধনি কোম্পানিটি। আগের হিসাব বছরের জন্য ২০ শতাংশ নগদের পাশাপাশি ২০ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিটি। ২০১৫-১৬ হিসাব বছরে ৫ শতাংশ নগদ ও ২০১৪-১৫ হিসাব বছরে ২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ পেয়েছিলেন কোম্পানির শেয়ারহোল্ডাররা।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কোম্পানিটির শেয়ারের সর্বশেষ দর ছিল ২১২ টাকা ৮০ পয়সা। গত এক বছরে শেয়ারটির দর ১৯১ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ৩৫৬ টাকার মধ্যে ওঠানামা করেছে।

অবসায়ন প্রক্রিয়ায় থাকা পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস লিমিটেডের পরিচালকদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন সব প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে দেশের সব ব্যাংককে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে নর্দান জুটের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়। নর্দান জুট ও পিপলস লিজিংয়ের চেয়ারম্যান ছিলেন উজ্জ্বল কুমার নন্দী। তাছাড়া নর্দান জুটের পরিচালক অমিতাভ অধিকারী প্রশান্ত কুমার হালদারের আত্মীয়। মূলত উজ্জ্বল কুমার নন্দীর মাধ্যমে নর্দান জুট ও পিপলস লিজিংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল পিকে হালদারের কাছে।

মেঘনা পেট ও কনডেন্সড মিল্ক : পুঁজিবাজারে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে তালিকাভুক্ত দুটি কোম্পানির উৎপাদন দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। কোম্পানি দুটি হলো মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক লিমিটেড। সম্প্রতি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এ তথ্য জানিয়েছে।

সর্বশেষ অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২-২৩ হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জুলাই-মার্চ) মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ১৭ পয়সা, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ১৮ পয়সা। সর্বশেষ ৩০ জুন সমাপ্ত ২০২১-২২ হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি মেঘনা পেট।

অন্যদিকে ২০২২-২৩ হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জুলাই-মার্চ) মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ১ টাকা ৫৮ পয়সা, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ৫ টাকা ৩৪ পয়সা।

সর্বশেষ ৩০ জুন সমাপ্ত ২০২১-২২ হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি মেঘনা কনডেন্সডও।

দুলামিয়া কটন মিলস : সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২২-২৩ হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জুলাই-মার্চ) দুলামিয়া কটন মিলসের শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৫৬ পয়সা, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ৬৫ পয়সা। আলোচ্য হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ১৯ পয়সা, যা আগের হিসাব বছরের একই সময়ে ছিল ৮ পয়সা। গত ৩১ মার্চ শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট দায় (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৩৯ টাকা ৭ পয়সায়।

মেট্রো স্পিনিং : বস্ত্র খাতের মেট্রো স্পিনিং লিমিটেডের কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম এক বছর বন্ধ থাকবে। মূলত কারখানার ভবন পুনর্নির্মাণ, যন্ত্রপাতি স্থাপন ও পরীক্ষামূলক উৎপাদনের জন্য কারখানার কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছে কোম্পানিটি।

জানা যায়, কোম্পানিটি মনে করছে এক বছরের মধ্যেই কারখানায় বিএমআরই (ভারসাম্য, আধুনিকায়ন, প্রতিস্থাপন ও সম্প্রসারণ) সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। কিছুসংখ্যক পুরনো যন্ত্রপাতি খুলে ফেলার পর বিক্রি করে দেয়া হবে। বিএমআরই বাস্তবায়নের অগ্রগতি ও কারখানায় বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর বিষয়টি বিনিয়োগকারী ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে সময়মতো জানানো হবে। বিএমআরই সম্পন্নের পর কারখানার বিদ্যমান সক্ষমতা ১১০ শতাংশ বাড়বে এবং সে অনুসারে কোম্পানিটির আয় ও মুনাফাও বাড়বে।

গত মাসে স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে মেট্রো স্পিনিং জানিয়েছিল, কারখানার বিএমআরই প্রকল্পের অধীনে অত্যাধুনিক মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ২৪ হাজার স্পিন্ডলস স্বয়ংক্রিয় মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি করে সেগুলো বিদ্যমান পুরনো যন্ত্রপাতির স্থলে প্রতিস্থাপন করা হবে।

অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২২-২৩ হিসাব বছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৯৮ পয়সা, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ৮৫ পয়সা। আর সর্বশেষ দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৪৭ পয়সা, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ৪৫ পয়সা। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ২০ টাকা ৯৭ পয়সায়।

৩০ জুন সমাপ্ত ২০২১-২২ হিসাব বছরের জন্য মোট ৮ শতাংশ লভ্যাংশের সুপারিশ করেছিল মেট্রো স্পিনিংয়ের পর্ষদ।

শেয়ার বিজনেস24.কম