
বিশ্বজুড়ে মুসলিমদের একটি বড় অংশ প্রবাসে অবস্থান করছেন। অনেকে বসবাস করছেন মুসলিম দেশে, আবার অনেকে অমুসলিম দেশেও কর্মরত। বিশেষ করে যারা অমুসলিম দেশের পেশাজীবী, তাদের জন্য হালাল ও হারাম উপার্জনের সীমারেখা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ইসলাম হালাল জীবিকা অর্জনকে শুধু বৈধ নয়, বরং ফরজ হিসেবে গণ্য করেছে।
হালাল উপার্জনের গুরুত্ব
পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, “হে রাসুলগণ! তোমরা উত্তম ও পবিত্র খাদ্য গ্রহণ করো এবং নেক আমল করো” (সুরা মুমিনুন, আয়াত ৫১)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “অন্যান্য ফরজের পর হালাল উপার্জনের চেষ্টা করাও একটি ফরজ।” (সুনানে বায়হাকি)
হালাল উপার্জনের মূলনীতিগুলো কী?
১. কাজটি বৈধ হতে হবে: অর্থাৎ যেকোনো বৈধ পেশা, যেমন খাদ্য, ওষুধ বা যন্ত্রপাতি বিক্রি, প্রকৌশল বা চিকিৎসা সেবা প্রদান, বা বৈধ সম্পদ ভাড়া দিয়ে উপার্জন করা—সবই হালাল।
-
হারাম কাজ অথবা সহায়ক না হওয়া: যেমন সুদ খাওয়া বা সুদি প্রতিষ্ঠানে কাজ করা, মদ পরিবহন, জুয়া পরিচালনা, প্রতারকদের সরঞ্জাম বিক্রি ইত্যাদি। এই কাজগুলো নিজেরাই হারাম, অথবা হারাম কাজে সহায়তা করে।
-
পরোক্ষ সহায়তা হলে তা হারাম নয়: উদাহরণস্বরূপ, কোনো জুয়াড়ির কাছে ওষুধ বা খাবার বিক্রি করা—যেখানে উদ্দেশ্য তার পাপ কাজে সহায়তা নয়—তা বৈধ। সাহাবিরাও মদিনার ইহুদি বাসিন্দাদের সঙ্গে বাণিজ্য করতেন।
-
হালাল-হারাম পৃথক থাকলে নিরুপায় ব্যক্তি কাজ করতে পারে: যদি কোনো প্রতিষ্ঠানে হালাল ও হারাম পণ্য পৃথকভাবে থাকে, এবং কেউ কেবল হালাল অংশে কাজ করে ও হারামে সহায়তা না করে, তবে সে কাজটি করতে পারে। তবুও এমন কাজ ছাড়ার চেষ্টা করা উত্তম।
-
সন্দেহযুক্ত উপার্জন পরিহার করা উত্তম: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “সন্দেহযুক্ত বিষয় এড়িয়ে চলা মানুষকে তার দ্বিন ও ইজ্জত রক্ষা করতে সহায়তা করে।” (বুখারি, হাদিস ৫২)
হালাল উপার্জনের জন্য বিকল্প আছে
আল্লাহ তাআলা বলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য সংকট থেকে উত্তরণের পথ খুলে দেন এবং তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দেন যা সে কল্পনাও করতে পারে না।” (সুরা তালাক, আয়াত ২-৩)
সুতরাং, হালাল জীবিকা অর্জন কষ্টকর হলেও অসম্ভব নয়। প্রয়োজন শুধু সচেতনতা, পরিশ্রম এবং আল্লাহর প্রতি ভয়। হারাম বর্জন করে হালালের পথে চলার চেষ্টাই মুমিনের পরিচয়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হালাল রিজিক গ্রহণ এবং হারাম থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।