
অনেকেই ঘুমানোর সময় উপুড় হয়ে শোয়ার অভ্যাসে অভ্যস্ত। সাময়িকভাবে এটি আরামদায়ক মনে হলেও, দীর্ঘমেয়াদে এটি স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, এভাবে শোয়ার ফলে মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক গঠন বিঘ্নিত হয়, ঘাড় ও পিঠে ব্যথা দেখা দেয়, এমনকি শ্বাস-প্রশ্বাসের ক্ষেত্রেও সমস্যা তৈরি হতে পারে। উপুড় হয়ে শোয়ার ফলে পেটের নিচের অংশে চাপ সৃষ্টি হয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য বা মলত্যাগজনিত জটিলতাও দেখা দিতে পারে।
তবে এই শারীরিক ক্ষতির চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ইসলাম ধর্মে এমনভাবে শোয়ার ব্যাপারে কঠোরভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বহু হাদিসে উপুড় হয়ে শোয়ার বিপরীতে সরাসরি সতর্কবার্তা পাওয়া যায়। হাদিস অনুযায়ী, মহান আল্লাহ এই ভঙ্গিতে শোয়া পছন্দ করেন না এবং এটি জাহান্নামিদের শোয়ার ভঙ্গি বলেও উল্লেখ করেছেন।
সহিহ হাদিসে বর্ণিত, একবার ইবনে তিখফা আল-গিফারী (রহ.) মসজিদে শেষ রাতে উপুড় হয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন। রাসুল (সা.) এসে নিজ হাতে তাঁকে জাগিয়ে বলেন, "এভাবে শোয়া আল্লাহ পছন্দ করেন না" (আদবুল মুফরাদ, হাদিস : ১১৯৯)। আরেকটি হাদিসে আবু জর (রা.) বলেন, “আমি উপুড় হয়ে শুয়ে থাকা অবস্থায় নবী (সা.) এসে পা দিয়ে খোঁচা দিয়ে বললেন, ‘হে জুনাইদিব! এটা তো জাহান্নামের শয়ন’” (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৭২৪)।
এই সতর্কতা শুধু হাদিসেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং কোরআনেও জাহান্নামিদের উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপের বর্ণনা রয়েছে—"যেদিন তাদের উপুড় করে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে জাহান্নামের দিকে; সেদিন বলা হবে, জাহান্নামের যন্ত্রণা আস্বাদন কর।" (সুরা : ক্বমার, আয়াত : ৪৮)
তবে ইসলাম এই শোয়ার ভঙ্গিকে হারাম বলেনি। বরং এটি নিরুৎসাহিত করা হয়েছে এবং নবীজির (সা.) জীবনাচরণ অনুসরণে এটি পরিত্যাগ করাই উত্তম। যদি কেউ অসুস্থতার কারণে বা চিকিৎসা-সংক্রান্ত প্রয়োজনে উপুড় হয়ে শোয়া বাধ্যতামূলক হন, তবে তা ব্যতিক্রম।
অতএব, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.) যে শোয়ার ভঙ্গি পছন্দ করেন না, তা থেকে দূরে থাকা উচিত আমাদের সবারই। এতে যেমন শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত হবে, তেমনি আখিরাতের জন্যও হবে শান্তির বার্তা। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সুন্নাহ অনুযায়ী জীবনযাপন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।