ঢাকা   মঙ্গলবার ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ২০ কার্তিক ১৪৩২

প্রাকৃতিক রঙে শিল্পবিপ্লবের অগ্রদূত রুবি গজনবী

প্রাকৃতিক রঙে শিল্পবিপ্লবের অগ্রদূত রুবি গজনবী

বাংলাদেশের কারুশিল্প আন্দোলনের অগ্রদূত রুবি গজনবী ছিলেন প্রাকৃতিক রঙের এক নিঃস্বার্থ গবেষক ও উদ্ভাবক। ১৯৭৯ সালে ভারতে একটি ওয়ার্কশপে অংশ নিয়ে প্রাকৃতিক রঙের প্রতি আগ্রহ জন্মে তাঁর। ঢাকায় ফিরে জয়নুল আবেদীন, কামরুল হাসানদের সঙ্গে কাজ করে প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে রং তৈরির কাজে মনোনিবেশ করেন। গাছের গুঁড়া, ফুল, পাতা, এমনকি পেঁয়াজের খোসা দিয়েও তিনি রং তৈরির পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান। প্রথমে ১৫টি, পরে UNDP-র অর্থায়নে আরও ১৫টি রং তৈরি করে তিনি পৌঁছান ৩০টি প্রাকৃতিক রঙের সফলতায়।

১৯৯০ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘অরণ্য ক্রাফট’—যা পরিবেশবান্ধব পোশাক তৈরিতে প্রাকৃতিক রঙ ব্যবহারে পথিকৃৎ প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি পায়। তাঁর প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে প্রাকৃতিক রঙ ব্যবহার নতুন মাত্রা পায় এবং দেশের কারুশিল্পে নবজাগরণ ঘটে।

শুধু শিল্প নয়, রুবি গজনবীর জীবন ছিল সাংস্কৃতিক ও সামাজিক উদ্যোগে ভরপুর। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় কারুশিল্প পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, প্রেসিডেন্ট ও নির্বাহী পদেও দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতায় ২০১৮ সালের জামদানি উৎসব সোনারগাঁওকে ‘ওয়ার্ল্ড ক্রাফট সিটি’ স্বীকৃতি এনে দেয়। তিনি জামদানিকে জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

রুবি গজনবী আন্তর্জাতিক পরিসরেও বাংলাদেশের নাম তুলে ধরেন। তিনি ছিলেন ওয়ার্ল্ড ক্রাফটস কাউন্সিলের সদস্য এবং এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের রঞ্জক কর্মসূচির চেয়ারপারসন। তাঁর রচিত দুটি বই—‘নকশা’‘রঙিন’—বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী নকশা ও রঙের উপর মূল্যবান দলিল।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এবং বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সদস্য হিসেবেও তাঁর সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রমাণ করে—শুধু রঙ নয়, রুবি গজনবী সমাজ ও সংস্কৃতির প্রতিও ছিলেন গভীরভাবে দায়বদ্ধ। তাঁর জীবন ও কর্ম বাংলাদেশের কারুশিল্প জগতে এক অনন্য অধ্যায় হয়ে থাকবে।