
দীর্ঘস্থায়ী মন্দা আর বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকটে বিপর্যস্ত দেশের শেয়ারবাজারে তাৎক্ষণিক, সাহসী ও বাস্তবভিত্তিক প্রণোদনার জোর দাবি তুলেছে ব্রোকারেজ হাউসগুলোর নেতৃত্ব। তারা বলছে, কাগুজে সংস্কারে আর আস্থা ফেরানো যাবে না—এখন দরকার দৃশ্যমান পরিবর্তন। এই দাবি উঠে এসেছে রোববার (১৮ মে) ঢাকায় আয়োজিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে, যেখানে ডিএসই, বিএসইসি, সিডিবিএল, সিসিবিএল ও ডিবিএ’র শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশ নেন। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকটি এমন এক সময় হলো, যখন বাজারের লাগাতার পতনে ক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা রাজপথে নেমে প্রতীকী প্রতিবাদে অংশ নিচ্ছেন। কেউ কফিন বা কাফনের প্রতীক ব্যবহার করে বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগও দাবি করছেন। এই প্রেক্ষাপটে ডিএসই চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, মূলধন ও অর্থবাজারের সমন্বয়হীনতা, ধীর আইপিও প্রক্রিয়া, বন্ড-মিউচুয়াল ফান্ড ব্যবস্থার অকার্যকারিতা, স্বচ্ছতা সংকট ও দুর্বল তদারকির কারণে বিনিয়োগকারীরা আস্থা হারিয়ে ফেলেছে।
মমিনুল ইসলাম বাজারে আস্থা ফেরাতে দুই ধাপের পরিকল্পনা তুলে ধরেন—তাৎক্ষণিক কর ও ফি-সংক্রান্ত প্রণোদনা এবং দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত সংস্কার। তার প্রস্তাবিত পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে বিও হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ ফি মওকুফ, মূলধন লাভ কর অব্যাহতি, ব্রোকারেজ কমিশন কমানো, ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ডিভিডেন্ড আয় করমুক্ত রাখা এবং উৎসে করকে চূড়ান্ত হিসেবে বিবেচনা করা। পাশাপাশি নেতিবাচক ইক্যুইটির বোঝা হ্রাস, লেনদেন কর কমানো এবং ব্রোকারদের একীভূত গ্রাহক অ্যাকাউন্ট থেকে অধিকাংশ ডিভিডেন্ড ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, তালিকাভুক্ত ও অনালিখিত কোম্পানির কর ব্যবধান ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা, বড় ঋণের ক্ষেত্রে মূলধন বাজার থেকে অর্থায়ন বাধ্যতামূলক করা এবং সম্পদ-সমর্থিত বন্ডের রিটার্ন করমুক্ত রাখার মতো সংস্কার জরুরি। আগামী দুই বছরের মধ্যে আইপিও ও বন্ড ইস্যুর পুরো প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজ করার প্রস্তাবও দেন তিনি।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান জানান, বাজার চাঙা করতে সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের ইতিবাচক ইঙ্গিত থাকলেও তার প্রতিফলন বাজারে সময় সাপেক্ষ। তিনি জানান, বিএসইসি ইতিমধ্যে পাবলিক ইস্যু নীতিমালায় সংস্কার আনতে কাজ শুরু করেছে।
এদিকে, ডিএসই পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, বাজারে শুধু খুচরা বিনিয়োগকারী নয়, ব্রোকাররাও এখন চরম আর্থিক চাপে। বাস্তবমুখী সিদ্ধান্ত যেমন বিনিয়োগবান্ধব বাজেট, বিও হিসাব ফি হ্রাস ও অগ্রিম আয়কর বাতিল ছাড়া বাজারে আস্থা ফিরবে না বলে জানান তিনি। সব মিলিয়ে, বাজারে আস্থা ফেরাতে এখনই সময় দ্রুত ও সাহসী সিদ্ধান্ত নেওয়ার।