
রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে শুরু হওয়া আলোচিত এক হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহমুদুল হক। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে পুলিশ তাঁকে আটক করে আদালতে পাঠায় এবং আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এই গ্রেপ্তার ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে এবং রংপুরে তৈরি হয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও বিতর্ক।
গত ৩ জুন নিহত ছমেস উদ্দিনের স্ত্রী আমেনা বেগম একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, গত বছরের ২ আগস্ট স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সরকারি প্রশাসনের নেতৃত্বে ছমেস উদ্দিনকে দেশি অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়, যাতে তিনি মারা যান। তবে ছমেস উদ্দিনের কবরের সাইনবোর্ডে লেখা ভিন্ন কাহিনি—তিনি পুলিশ দেখে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করতে গিয়ে পড়ে যান এবং স্ট্রোক করে মারা যান।
মাহমুদুল হকের স্ত্রী অভিযোগ করেছেন, তাঁর স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হয়েছে। তিনি জানান, মামলার বাদীর কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে ইচ্ছেমতো আসামির তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এর নেপথ্যে রয়েছেন দুই প্রভাবশালী ব্যক্তি, যাদের নাম এখন প্রকাশ করছেন না তিনি।
মামলার বাদীর ছেলে আশিকুর রহমানও পুরো ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নন। তিনি জানান, পুলিশ দেখে তাঁর বাবা দৌড় দিয়েছিলেন এবং পড়ে যান। কীভাবে মৃত্যুর ঘটনা ঘটল, সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত নন। এ ঘটনায় স্থানীয়দের ভাষ্যও মামলার অভিযোগের সঙ্গে মেলে না। অনেকের মতে, ছমেস উদ্দিন হার্টের রোগী ছিলেন এবং ভয়ে পালানোর সময় হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
হত্যা মামলায় ওসি নিজেই তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, যা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। স্থানীয় অনেকে অভিযোগ করছেন, মামলায় নির্দোষ ব্যক্তিদের ফাঁসানো হয়েছে এবং এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
মাহমুদুল হকের গ্রেপ্তারের খবরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা থানায় গিয়ে গ্রেপ্তারের কারণ জানতে চান এবং এর প্রতিবাদ করেন। অনেকের ভাষ্য, মাহমুদুল হক সব সময় মানবাধিকার এবং ন্যায়ের পক্ষে সোচ্চার ছিলেন, যা তাঁকে টার্গেট করার অন্যতম কারণ হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মামলাটি শুধু একটি মৃত্যুর কারণ নিয়ে নয়, বরং এর পেছনের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রশ্নেও বড় বিতর্ক তৈরি করেছে।