শেয়ারবাজারের করপোরেট গভর্ন্যান্সে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ এবং তাদের ভাতা কাঠামোয় বড় ধরনের পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে শেয়ারবাজার সংস্কারে গঠিত টাস্কফোর্স। টাস্কফোর্সের প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রতিটি তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে এখন থেকে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের জন্য একটি নির্ধারিত প্যানেল থেকে বাছাই করতে হবে। ফলে ইচ্ছেমতো কাউকে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের সুযোগ আর থাকবে না।
প্রস্তাবিত নীতিমালায় স্বতন্ত্র পরিচালকদের মাসিক ৫০ হাজার টাকা ভাতা এবং প্রতি বোর্ড সভায় উপস্থিতির জন্য ১০ হাজার টাকা করে অতিরিক্ত ভাতা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। বুধবার (১৮ জুন) এই খসড়া নীতিমালা শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কাছে জমা দেয় টাস্কফোর্স।
টাস্কফোর্সের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল আমিন জানান, স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে যোগ্যতা যাচাইয়ের কঠোর শর্ত যুক্ত করা হয়েছে, যাতে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতায় ঘাটতি আছে এমন কেউ নিয়োগ না পায়। মাসিক ভাতা বৃদ্ধির পেছনে যুক্তি হিসেবে তিনি বলেন, ব্যাংক খাতে পরিচালকরাও এই সুবিধা পেয়ে থাকেন, তাই অন্য খাতের পরিচালকদের ক্ষেত্রেও সমতা আনা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ভাতা বৃদ্ধিতে ভালো কোম্পানিগুলোর ওপর বড় কোনো আর্থিক চাপ পড়বে না, কারণ দুর্বল বা অনুপযুক্ত কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তির সুযোগ না দেওয়ার দিকেই নজর দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যমান নীতিমালার এক-পঞ্চমাংশ স্বতন্ত্র পরিচালক রাখার বিধান ও বোর্ডের চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র পরিচালক হতে হবে—এই শর্ত অপরিবর্তিত থাকছে। প্রস্তাবিত খসড়ায় করপোরেট গভর্ন্যান্স নীতিমালার সুপারিশগুলো তালিকাভুক্তির আগে ও পরে ভাগ করা হয়েছে, যাতে কোম্পানিগুলোকে একই তথ্য বারবার জমা না দিতে হয়।
অডিট ব্যবস্থায়ও আনা হয়েছে বড় পরিবর্তন। নতুন নিয়মে অডিট ফার্ম ও ব্যক্তিগত অডিটরদের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও বয়সের ভিত্তিতে ১০০ নম্বরের বেঞ্চমার্ক নির্ধারণ করা হয়েছে। সর্বোচ্চ পয়েন্টধারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অডিটের দায়িত্ব পাবেন, যা নিরীক্ষা প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও দক্ষতা নিশ্চিত করবে।
উল্লেখ্য, গত জানুয়ারিতে বিএসইসি গঠিত ৫ সদস্যের টাস্কফোর্স শেয়ারবাজার সংস্কারের অংশ হিসেবে এরই মধ্যে মার্জিন রুলস, আইপিও রুলস এবং মিউচুয়াল ফান্ড বিধিমালার চূড়ান্ত খসড়া জমা দিয়েছে। নতুন সুপারিশগুলো শেয়ারবাজারকে আরও সুশাসিত ও বিনিয়োগবান্ধব করতে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
