
ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে ব্যাংক বন্ধ থাকায় এটিএম বুথে টাকা তোলার ক্ষেত্রে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন গ্রাহকেরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, ঈদের সময় গ্রাহকের নগদ টাকার চাহিদা মেটাতে এটিএম বুথ সচল রাখতে বলা হলেও বেশির ভাগ ব্যাংক তা বাস্তবে বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে এবারের ঈদুল আজহায় টানা ১০ দিনের ব্যাংক ছুটিতে বিপাকে পড়েছেন লাখো গ্রাহক।
রাজধানী থেকে শুরু করে বিভাগীয় শহর ও জেলা-উপজেলা পর্যন্ত অনেক বুথেই ছিল নগদ টাকার সংকট। গ্রাহকরা এক ব্যাংকের কার্ড নিয়ে অন্য ব্যাংকের বুথে গিয়ে টাকা তুলতে পারেননি। কেউ কেউ নিজের ব্যাংকের বুথেও টাকা না পেয়ে ফিরে গেছেন। এমনকি বেশ কিছু ব্যাংক গ্রাহকদের লিমিট কমিয়ে দেওয়ায় সমস্যার মাত্রা আরও বেড়েছে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এটিএম বুথ দুটি ব্যবস্থায় পরিচালিত হয়—শাখা-সংলগ্ন ও স্বতন্ত্র। শাখা–সংলগ্ন বুথে শাখা থেকেই টাকা সরবরাহ করা হয়, কিন্তু ছুটির কারণে কর্মকর্তারা উপস্থিত না থাকায় অনেক বুথে টাকা জমা করা যায়নি। অন্যদিকে, দূরের বুথগুলো পরিচালনা করে নিরাপত্তা সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে ঈদের সময় চাহিদা বেশি থাকায় তারাও চাহিদা অনুযায়ী টাকা সরবরাহ করতে পারেনি।
গ্রাম ও মফস্বলে ভুট্টা উৎপাদনকারী এলাকায় এটিএম বুথে চাপ আরও বেশি ছিল। কারণ, মাঠ থেকে ভুট্টা কিনে কম দামে মজুত করার প্রতিযোগিতায় থাকা ব্যবসায়ীরা ব্যাংক বন্ধ থাকায় এটিএমের দিকেই ঝুঁকেছেন। দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, রংপুর, চুয়াডাঙ্গা, পঞ্চগড়, নীলফামারী, ঝিনাইদহ, জামালপুর ও গাইবান্ধা এসব অঞ্চলে ভুট্টা কেনা-বেচার কারণে বুথে টাকার চাপ ছিল সর্বোচ্চ।
ব্যাংক কর্মকর্তারা আরও জানান, একটি এটিএম বুথে সাধারণত সর্বোচ্চ ৮০ লাখ টাকা রাখা যায়। ঈদের সময় চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এই টাকা দ্রুত শেষ হয়ে যায়। শাখার নিকটবর্তী বুথগুলোতে টাকা সরবরাহ সহজ হলেও দূরবর্তী বুথে তা কঠিন হয়ে পড়ে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, বর্তমানে দেশে মোট ১২ হাজার ৯৪৬টি এটিএম বুথ ও ৭ হাজার ১২টি ক্যাশ রিসাইক্লিং মেশিন রয়েছে। কিন্তু ব্যাংকের লোকবল সংকট ও এটিএম সেবায় আর্থিক লাভ না থাকায় অনেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনাকে গুরুত্ব দেয়নি, ফলে সাধারণ গ্রাহকই ভুগেছেন সবচেয়ে বেশি।