
বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত ধনকুবেরদের সঙ্গে ‘আর্থিক সমঝোতার’ পথে হাঁটার ইঙ্গিত দিয়েছে বাংলাদেশ। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানান, অপেক্ষাকৃত হালকা ধরনের মামলার ক্ষেত্রে দেওয়ানি মামলা এবং সমঝোতা একটি কার্যকর বিকল্প হিসেবে বিবেচনায় রয়েছে। মূল লক্ষ্য—যত দ্রুত সম্ভব পাচার হওয়া অর্থ দেশের কোষাগারে ফেরত আনা।
সম্পদের পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে দেশ থেকে পাচার হওয়া বিপুল অর্থ ফেরত আনতে সরকার আন্তর্জাতিক সহায়তা ও মামলার তহবিল সংগ্রহে জোর দিচ্ছে। গভর্নর মনসুর জানিয়েছেন, তিনি অন্তত ১০ কোটি ডলার অর্থ সংগ্রহের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। ইতিমধ্যে কিছু মামলার খরচ জোগানোর ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়ার লিটিগেশন ফান্ডার অমনি ব্রিজওয়ে-এর সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে।
শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। শেখ হাসিনার পরিবার ও ঘনিষ্ঠ মহলকে লক্ষ্য করে ১১টি অগ্রাধিকারভিত্তিক তদন্ত ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। এমনকি কিছু অভ্যন্তরীণ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দও করা হয়েছে। ইউনূস এই অভিযানকে ‘চুরি হওয়া অর্থ উদ্ধার’ হিসেবে উল্লেখ করে যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে আরও কার্যকর সহযোগিতা কামনা করেছেন।
সরকারি এক শ্বেতপত্র অনুযায়ী, শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে দেশ থেকে পাচার হয়েছে আনুমানিক ২৩৪ বিলিয়ন ডলার, যা দেশের অর্থনীতির জন্য এক ভয়াবহ ধাক্কা। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি প্রকল্প ও ব্যাংকিং খাত ব্যবহার করে প্রভাবশালী মহল অর্থপাচারে জড়িত ছিলেন।
তবে এই অভিযানের বিরোধিতা করেছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ। তাদের দাবি, এই অভিযান ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ ছাড়া কিছু নয়। ইতিমধ্যে দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে বর্তমান সরকার।
অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী এপ্রিলেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তার আগেই পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়া শুরু করতে চায় প্রশাসন। এই লক্ষ্যে লিটিগেশন ফান্ডিং এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তা বাংলাদেশ সরকারের কৌশলগত অংশ হিসেবে গুরুত্ব পাচ্ছে।
এখন দেখার বিষয়—এই ‘আর্থিক সমঝোতা’ আদৌ কতটা অর্থবহ হয়ে ওঠে এবং দেশের অর্থনীতিকে কতটা চাঙ্গা করতে পারে পাচার হওয়া এই বিপুল অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ।