
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) জেনেভায় অনুষ্ঠিত ১১৩তম আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশ সরকার দাবি করেছে, ট্রেড ইউনিয়ন নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক অধিকাংশ মামলাই ইতিমধ্যে প্রত্যাহার করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সম্মেলনের প্লিনারি অধিবেশনে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন এ তথ্য জানান। শ্রম মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তবে শ্রমিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে এই দাবি পুরোপুরি মানতে নারাজ নেতারা। বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার ফেডারেশনের সভাপতি কল্পনা আক্তার বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বড় অপরাধীদের দ্রুত ছেড়ে দেওয়া হলেও শ্রমিকদের মামলায় কোনো গতি দেখা যায় না। একই মত প্রকাশ করেন আইবিসির সাধারণ সম্পাদক বাবুল আখতারও। তিনি জানান, সম্মেলনে যাওয়ার আগে কিছু মামলা তড়িঘড়ি করে প্রত্যাহার করা হলেও এখনো অনেক শ্রমিক ও নেতার নামে মামলা রয়েছে।
শ্রম সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক হয়রানিমূলক ৪৫টি মামলার মধ্যে ৪৩টি মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে আশুলিয়া ও টঙ্গীর মতো জায়গায় অজ্ঞাতনামা হাজারো শ্রমিক এখনো মামলার ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ। তিনি বলেন, এসব মামলা শ্রমিকদের জীবন ও পেশাগত নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলছে।
জেনেভায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বাংলাদেশ পক্ষ থেকে মোট ২৮ জন প্রতিনিধি অংশ নেন। এতে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইএলও কনভেনশন C155, C187 এবং C190 অনুস্বাক্ষরের উদ্যোগের কথাও জানানো হয়। এ ছাড়া আরও ১২২ জন শ্রম পরিদর্শক নিয়োগ এবং শ্রম আইন সংশোধনের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে বাংলাদেশ।
সম্মেলনে শ্রম অধিকার রক্ষা, কারিগরি বৈষম্য হ্রাস এবং ন্যায্য বাণিজ্যের ওপর গুরুত্বারোপের পাশাপাশি ফিলিস্তিনকে পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রের স্বীকৃতিকে সাধুবাদ জানায় বাংলাদেশ। শ্রম উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করেন, শ্রম খাতের উন্নয়নে আইএলও ভবিষ্যতে আরও কারিগরি সহায়তা দেবে।
সামগ্রিকভাবে, শ্রমিকদের নামে মামলা প্রত্যাহার এবং শ্রমিক অধিকার রক্ষায় সরকারের সদিচ্ছার বার্তা দেওয়া হলেও বাস্তবতা নিয়ে শ্রমিক সংগঠনগুলোর প্রশ্ন ও উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে।