ঢাকা   শনিবার ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

৪৫ হাজার বিও হিসাব শেয়ারশূন্য: শেয়ারবাজারে আস্থাহীনতার প্রতিচ্ছবি

শেয়ারবাজার

শেয়ারবিজনেস ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:৫৮, ১৪ জুন ২০২৫

সর্বশেষ

৪৫ হাজার বিও হিসাব শেয়ারশূন্য: শেয়ারবাজারে আস্থাহীনতার প্রতিচ্ছবি

দেশের শেয়ারবাজারে দীর্ঘমেয়াদি মন্দা, অধিকাংশ কোম্পানির অস্বাভাবিক দরপতন এবং প্রত্যাশিত রিটার্ন না পাওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান হতাশা দেখা দিচ্ছে। এর প্রভাব পড়েছে বিও হিসাবেও। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুনের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ৪৫ হাজার ৩৬৯টি বিও হিসাব পুরোপুরি শেয়ারশূন্য হয়ে পড়েছে—অর্থাৎ এসব অ্যাকাউন্টে আর কোনো শেয়ার নেই।

সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) জানায়, জানুয়ারিতে শেয়ারশূন্য বিও হিসাব ছিল ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৪২৭টি, যা ৪ জুন শেষে বেড়ে হয়েছে ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৭৯৬টি। একই সময়ে শেয়ারধারী হিসাব কমেছে ৪০ হাজার ৩৮১টি। জানুয়ারিতে যেখানে শেয়ারধারী হিসাব ছিল ১২ লাখ ৭১ হাজার ৪৯৯টি, তা জুনে নেমেছে ১২ লাখ ৩১ হাজার ১৬৮টিতে—যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকটের স্পষ্ট প্রতিফলন।

তবে এর মাঝে সামান্য একটি ইতিবাচক দিক হলো, মোট বিও হিসাবের সংখ্যা সামান্য বেড়েছে। জানুয়ারির ১৬ লাখ ৬৫ হাজার ১৩৪টি থেকে জুনে দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৬৭ হাজার ৮৯৭টিতে। এর মানে, নতুন কিছু বিনিয়োগকারী হয়তো বাজারে প্রবেশ করছেন, তবে তারা এখনো শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছেন। সম্ভবত তারা ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

লিঙ্গভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এই সময়কালে পুরুষ বিও হিসাবধারী বেড়েছেন ৬ হাজার ৫০৭ জন, নারীর সংখ্যা বেড়েছে মাত্র ২৫৬ জন। বিপরীতে, প্রবাসী বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কমে হয়েছে ৪৬ হাজার ৩৮৬—যা কমেছে ৩০৫ জন।

বাজারের সামগ্রিক চিত্রও আশাব্যঞ্জক নয়। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স জানুয়ারিতে যেখানে ছিল ৫,২১৮ পয়েন্ট, জুনে নেমে এসেছে ৪,৭০৯ পয়েন্টে। অর্থাৎ সূচকের পতন হয়েছে ৫০৯ পয়েন্ট। একই সময়ে দৈনিক লেনদেন ছিল সর্বোচ্চ ৬০৭ কোটি এবং সর্বনিম্ন ২২৪ কোটি টাকার মধ্যে—যা বাজারে স্নায়ুচাপ ও তারল্য সংকটের ইঙ্গিত দেয়।

বিশ্লেষকদের মতে, একের পর এক কোম্পানির শেয়ারে দরপতন, আয় ও মুনাফায় পতন এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক চাপে বাজারে অনিশ্চয়তা চরমে পৌঁছেছে। বিনিয়োগকারীরা তাই ঝুঁকি এড়াতে শেয়ার বিক্রি করে ‘এক্সিট’-এর পথ বেছে নিচ্ছেন।

তবে আসন্ন বাজেটে শেয়ারবাজার পুনরুদ্ধারে নেওয়া উদ্যোগগুলো নিয়ে কিছুটা আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা। তারা মনে করেন, কর্পোরেট করের ব্যবধান বৃদ্ধি, সিকিউরিটিজ ট্রেডিংয়ে অগ্রিম আয়কর হ্রাস এবং মার্চেন্ট ব্যাংকের করহার কমানোর মতো প্রণোদনামূলক পদক্ষেপ বাস্তবায়ন হলে বাজারে নতুন করে আস্থা ফিরবে। এতে তারল্য ও কার্যকারিতা বাড়বে এবং দীর্ঘমেয়াদে শেয়ারবাজার একটি স্থিতিশীল ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ ফিরে পাবে।

বিশ্লেষকদের মতে, এসব পদক্ষেপ কেবল তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর জন্য বিনিয়োগ আকর্ষণীয় করে তুলবে না, বরং অর্থনীতির সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিতেও সহায়ক হবে। তবে সেই সুফল পেতে হলে বাজারে স্বচ্ছতা, শাসনব্যবস্থা ও নীতিনির্ধারণে ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করা জরুরি।

সর্বশেষ