
সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বড় ধরনের সংস্কারে নেমেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এক ধাক্কায় ৪৫টি কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে। ফলে মোট কর্মসূচির সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৯৫–এ, যা আগের ছিল ১৪০টি। একই সঙ্গে বহু আলোচিত একটি সিদ্ধান্ত এসেছে—সামাজিক নিরাপত্তা খাত থেকে সঞ্চয়পত্রের সুদকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এত দিন এটি অন্তর্ভুক্ত থাকলেও এবার অর্থ উপদেষ্টা স্পষ্টভাবে তা বাদ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, পেনশন খরচকে আলাদা করে দেখানো হয়েছে। পেনশন ছাড়া এই খাতে বরাদ্দ থাকছে ৮১ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ১৪.৭৮ শতাংশ এবং জিডিপির ১.৮৭ শতাংশ। যদিও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) অনুযায়ী এই খাতে জিডিপির কমপক্ষে ৫ শতাংশ বরাদ্দ থাকা উচিত। চলতি অর্থবছরে (২০২৪–২৫) সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা, তবে সংশোধিত বাজেটে তা কমে দাঁড়ায় ১ লাখ ২ হাজার ১২৭ কোটিতে।
নতুন বাজেটে আরেকটি বড় পরিবর্তন এসেছে উপকারভোগী নির্ধারণে। সরকার 'ডায়নামিক সোশ্যাল রেজিস্ট্রি (ডিএসআর)' নামের প্রযুক্তিনির্ভর একটি তথ্যভান্ডার চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। এর মাধ্যমে অনলাইনে তথ্য বিশ্লেষণ করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে উপযুক্ত সুবিধাভোগী নির্ধারণ করা হবে। প্রাথমিকভাবে আটটি উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে এটি চালু হচ্ছে। বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা এবং মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির আওতায় ডিএসআর ব্যবহারের কাজ চলছে।
তবে কর্মসূচির সংখ্যা কমলেও ভাতা ও সুবিধাভোগীর সংখ্যা বেড়েছে। বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধীসহ বিভিন্ন ভাতার মাসিক অঙ্ক ৫০–১০০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। যেমন—বয়স্ক ভাতা ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা, বিধবা ভাতা ৫৫০ থেকে ৬৫০ টাকা, প্রতিবন্ধী ভাতা ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা এবং মা ও শিশু সহায়তা ভাতা ৮৫০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব এসেছে।
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান এই সংস্কারকে ইতিবাচক বলে উল্লেখ করেছেন। তবে তিনি মনে করেন, এখনো অনেক অপ্রয়োজনীয় খাত বাজেটের ভেতরে রয়ে গেছে। ২০১৫ সালের জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্রে (NSP) যেসব প্রস্তাব ছিল—রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ, ডুপ্লিকেট উপকারভোগী বাদ এবং অর্থ ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা—তা বাস্তবায়ন করতে পারলে প্রকৃত সংস্কার নিশ্চিত হবে।
এই সংস্কার সমাজের প্রান্তিক মানুষদের জন্য দীর্ঘমেয়াদে উপকার বয়ে আনবে কিনা, তা নির্ভর করবে বাস্তবায়নের সঠিকতা ও স্বচ্ছতার ওপর। আপাতত এই বাজেট প্রস্তাব একটি স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—সামাজিক নিরাপত্তায় দায়সারা হিসাব-নিকাশ নয়, দরকার সঠিক লক্ষ্যভিত্তিক পরিকল্পনা।