ঢাকা   বুধবার ২৮ মে ২০২৫, ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ধসে পড়া ২০ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিলের পথে বাংলাদেশ ব্যাংক

অর্থ ও বাণিজ্য

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১৩:৫৯, ২৭ মে ২০২৫

ধসে পড়া ২০ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিলের পথে বাংলাদেশ ব্যাংক

সংকটে থাকা ২০ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিলের উদ্যোগ

উচ্চ খেলাপি ঋণ, গ্রাহকের আমানত ফেরত দিতে ব্যর্থতা এবং দীর্ঘদিনের আর্থিক সংকটে জর্জরিত ২০টি বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়ে লাইসেন্স কেন বাতিল করা হবে না—তা জানতে চাওয়া হয়েছে। ১৫ দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলোকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই ২০টি প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশই কার্যত দেউলিয়া অবস্থায় রয়েছে। তাদের খেলাপি ঋণের হার ৮৩ শতাংশ ছাড়িয়েছে, যা গোটা আর্থিক খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে হয় একীভূত করা হবে, না হয় অবসায়নের সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

চিহ্নিত ২০টি প্রতিষ্ঠান:
সিভিসি ফাইন্যান্স, বে লিজিং, ইসলামিক ফাইন্যান্স, মেরিডিয়ান ফাইন্যান্স, জিএসপি ফাইন্যান্স, হজ্জ ফাইন্যান্স, ন্যাশনাল ফাইন্যান্স, আইআইডিএফসি, প্রিমিয়ার লিজিং, প্রাইম ফাইন্যান্স, উত্তরা ফাইন্যান্স, আভিভা ফাইন্যান্স, ফিনিক্স ফাইন্যান্স, পিপলস লিজিং, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, বিআইএফসি, ফারইস্ট ফাইন্যান্স এবং এফএএস ফাইন্যান্স।

এই তালিকায় পি কে হালদারের মালিকানাধীন ও ব্যবস্থাপনায় থাকা একাধিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। জানা গেছে, তিনি ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর ধ্বংসেও প্রভাব ফেলেন, যার মাধ্যমে দেশের আর্থিক খাতের একটি বড় অংশই বিপর্যয়ের মুখে পড়ে।

অর্থনৈতিক চিত্র:
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে এই ২০টি প্রতিষ্ঠানের মোট আমানতের পরিমাণ ছিল ২২,১২৭ কোটি টাকা, যার মধ্যে প্রায় ৮৩% ঋণ খেলাপি হয়ে গেছে। বিপরীতে জামানতের পরিমাণ মাত্র ৬,৮৯৯ কোটি টাকা, যা দিয়ে শুধুমাত্র ব্যক্তি আমানতকারীদের একটি অংশের অর্থ ফেরত দেওয়া সম্ভব।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠান কোনো সুদ-আয় করছে না, অথচ বছরে এমডিদের বেতন বাবদ ১২ কোটি এবং অন্যান্য ব্যয়ে যাচ্ছে আরও ১৯৪ কোটি টাকা। এতে করে প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পূর্ণরূপে লোকসানী অবস্থায় রয়েছে।

বিশ্লেষণ:
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পদক্ষেপ আর্থিক খাতে আস্থা ফেরাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তবে লাইসেন্স বাতিল বা অবসায়নের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আগে গ্রাহকের টাকা ফেরত নিশ্চিত করার রূপরেখা থাকা জরুরি।

উপসংহার:
একটি সময় যে প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের অর্থনীতিতে বিনিয়োগচক্র সচল রাখার দায়িত্ব পালন করত, আজ তারা পরিণত হয়েছে দেউলিয়াত্ব ও অনিয়মের প্রতীক হিসেবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর নজরদারি এবং বিচক্ষণ পদক্ষেপই পারে এই খাতকে পুনরুদ্ধার করতে—অন্যথায় আর্থিক খাতের বিশ্বাসযোগ্যতা আরও সংকটে পড়বে।