
যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক বাজারে এখনও শীর্ষে রয়েছে চীন। সস্তা দাম ও পোশাকের বৈচিত্র্য—এই দুই দিকেই চীনের অবস্থান শক্ত। চীনের চেয়ে বেশি দামে পোশাক রপ্তানি করলেও বৈচিত্র্যের কারণে দ্বিতীয় স্থানে ভিয়েতনাম। বাংলাদেশ এখনও মূলত তুলার তৈরি পোশাকে নির্ভরশীল এবং কৃত্রিম তন্তুর পণ্যে পিছিয়ে থাকায় দীর্ঘদিন ধরেই তৃতীয় স্থানে আটকে আছে।
যুক্তরাষ্ট্র গত বছর ২০০ দেশ থেকে ৮ হাজার ১৩২ কোটি ডলারের ৬৩৯ ধরনের পোশাক আমদানি করেছে। প্রতি পিস গড়ে ২.৬২ ডলারে পোশাক রপ্তানি করে সবচেয়ে কম দামে পণ্য দিয়েছে চীন। বাংলাদেশ ৩.৯১ ডলারে রপ্তানি করলেও বৈচিত্র্যে পিছিয়ে। চীন যেখানে ৬২৮ ধরনের পোশাক সরবরাহ করেছে, বাংলাদেশ করেছে মাত্র ৪৬১ ধরনের।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চীন প্রতি পিস ট্রাউজার রপ্তানি করেছে ৩.৭৮ ডলারে, যেখানে বাংলাদেশের দাম ৫.১৮ ডলার। শার্ট রপ্তানিতে বাংলাদেশ চীনকে ছাড়িয়ে গেলেও, সোয়েটার ও টি–শার্টে পিছিয়ে। কৃত্রিম তন্তুর পোশাকে চীন ও ভিয়েতনামের একচেটিয়া আধিপত্য—যেখানে বাংলাদেশের ৭১ শতাংশ পোশাকই তুলা নির্ভর।
তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বৈচিত্র্যের অভাব বাংলাদেশের বড় দুর্বলতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মোজা, গ্লাভস, সোয়েটারসহ বহু পণ্যে বাংলাদেশের অবস্থান খুবই পিছিয়ে। অথচ চীন গত বছর ১১৬ কোটি ডলারের মোজা এবং ৮৬ কোটি ডলারের কৃত্রিম সোয়েটার রপ্তানি করেছে, যেখানে বাংলাদেশ মোজা রপ্তানি করেছে মাত্র ৫ লাখ ডলারের এবং সোয়েটার ১৫ কোটি ডলারের।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভবিষ্যতে বিশ্ববাজারে কৃত্রিম তন্তুর পোশাকের চাহিদা আরও বাড়বে। প্রাইসওয়াটারহাউসকুপারসের গবেষণা অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক পোশাক বাজারে ৬০ শতাংশ হবে কৃত্রিম তন্তু ভিত্তিক। অথচ বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির মাত্র ২৭ শতাংশই এ ধরনের পণ্য।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মনে করেন, বৈচিত্র্য বাড়াতে হলে কৃত্রিম তন্তুভিত্তিক উৎপাদনে বিনিয়োগে উৎসাহ ও আলাদা প্রণোদনা দিতে হবে। একইসঙ্গে দেশের প্রণোদনাকাঠামোতে পরিবর্তন এনে নতুন ধরনের পোশাক তৈরিতে উদ্যোক্তাদের সম্পৃক্ত করতে হবে। নইলে যুক্তরাষ্ট্রসহ বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা ক্ষমতা ধীরে ধীরে হ্রাস পাবে।