ঢাকা   বৃহস্পতিবার ০৮ মে ২০২৫, ২৪ বৈশাখ ১৪৩২

মূলধন সংকটে ১৯ ব্যাংক, প্রথমবার বড় ঘাটতিতে ইসলামী ব্যাংক!

অর্থ ও বাণিজ্য

শেয়ারবিজনেস ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:১৫, ৭ মে ২০২৫

মূলধন সংকটে ১৯ ব্যাংক, প্রথমবার বড় ঘাটতিতে ইসলামী ব্যাংক!

দেশের ব্যাংক খাতে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কার দুর্নীতি ও অনিয়মের জেরে এবার প্রথমবারের মতো বড় অঙ্কের মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে ইসলামী ব্যাংকসহ ১৯টি ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৪ সালের ডিসেম্বরভিত্তিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ইসলামী ব্যাংক একাই প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকার ঘাটতিতে রয়েছে।

শুধু ইসলামী ব্যাংকই নয়, এস আলম গ্রুপ ও সালমান এফ রহমানের নিয়ন্ত্রণে থাকা একাধিক ব্যাংক—যেমন আইএফআইসি, ফার্স্ট সিকিউরিটি, সোশ্যাল ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী এবং ইউনিয়ন ব্যাংক—সবই এখন বড় অঙ্কের মূলধন ঘাটতিতে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এসব ব্যাংক থেকে যেসব অনিয়মে ঋণ বেরিয়ে গেছে, তা এখন খেলাপি হয়ে পড়ায় ব্যাংকগুলো নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে পারছে না। ফলে তারা মূলধন হারাচ্ছে। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এই সংকট দেশের পুরো আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতাকে ঝুঁকিতে ফেলছে।

সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মুস্তাফা কে মুজেরীর মতে, অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে এমন বিপর্যয় ঘটেছে। নতুন সরকার অনিয়ম বন্ধ করলেও কোনো দৃষ্টান্তমূলক বিচার হয়নি, যা ভবিষ্যতের জন্যও হুমকিস্বরূপ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডিসেম্বর ২০২৪ শেষে দেশের ব্যাংক খাতের মূলধন পর্যায় (সিআরএআর) কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩.০৮ শতাংশ, যেখানে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী এই হার ন্যূনতম ১০ শতাংশ হওয়া উচিত।

রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর সিআরএআর ছিল ঋণাত্মক ৮.৪২ শতাংশ, ইসলামি ব্যাংকগুলোর ৪.৯৫ শতাংশ এবং বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয়—ঋণাত্মক ৪১.০২ শতাংশ।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০২৪ সালের শেষে ১৯টি ব্যাংক সম্মিলিতভাবে ১ লাখ ৭১ হাজার ৭০০ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। একই সময়ে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা।

সবচেয়ে বেশি ঘাটতিতে পড়েছে জনতা ব্যাংক—৫২ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা। ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৭২ শতাংশ, যার একটি বড় অংশ এস আলম গ্রুপ, বেক্সিমকো, থার্মেক্সসহ কিছু প্রভাবশালী গ্রুপের কাছে রয়েছে।

বেসরকারি খাতে ইউনিয়ন ব্যাংকের ঘাটতি ১৫,৬৮৯ কোটি, ফার্স্ট সিকিউরিটির ১৩,৯৯১ কোটি, ইসলামী ব্যাংকের ১২,৮৮৫ কোটি, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ১১,৭০৮ কোটি এবং আইএফআইসির ৯,০২৯ কোটি টাকা।

এছাড়া, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক এবং আল-আরাফাহ্‌ ইসলামী ব্যাংকও মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক এসব ব্যাংকে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগসহ পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিচ্ছে। তবে অনেকেই বলছেন, যতক্ষণ না দোষীদের জবাবদিহির আওতায় আনা হয়, এই সংকট কাটিয়ে ওঠা কঠিন হবে।