
পাকিস্তানি মডেল ও অভিনেত্রী হুমাইরা আসগরকে রহস্যজনকভাবে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে করাচির একটি ভাড়া বাসায়। গতকাল মঙ্গলবার বেলা তিনটার দিকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশের ধারণা, হুমাইরার মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১৫ থেকে ২০ দিন আগে। এখনো তাঁর সঠিক বয়স জানা যায়নি। তবে পুলিশের ধারণা, তাঁর বয়স ৩০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, করাচির ওই ফ্ল্যাটে সাত বছর ধরে একাই থাকতেন হুমাইরা আসগর। সেখানে থেকেই কাজ করতেন। নিয়মিত ভাড়া পরিশোধ করতেন তিনি। তবে প্রতিবেশীদের সঙ্গে তাঁর তেমন যোগাযোগ ছিল না।
কিছুদিন ধরে তাঁর অ্যাপার্টমেন্ট থেকে দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করে। পাশের বাসিন্দারা বিষয়টি টের পান এবং বাড়ির মালিককে জানান। এর আগেও মালিক একাধিকবার তাঁকে ফোন করেছিলেন, তবে কোনো সাড়া মেলেনি। এতে সন্দেহ আরও বাড়ে। পরিস্থিতি আরও গুরুতর হওয়ায় আদালতের অনুমতি নিয়ে পুলিশের একটি দল ও বাড়ির মালিক ফ্ল্যাটটিতে যান। সেখানে কয়েকবার দরজায় কড়া নাড়া ও ডাকাডাকি করেও সাড়া না পেয়ে অবশেষে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়েন তাঁরা।
পুলিশ কর্মকর্তা ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (ডিআইজি) সৈয়দ আসাদ রাজা জানান, দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে তাঁরা ফ্লোরে পড়ে থাকা লাশ দেখতে পান। তিনি বলেন, ‘দেখে মনে হয়েছে, লাশটি বেশ কিছুদিন আগের। প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, মৃত্যু হয়েছে ১৫ থেকে ২০ দিন আগে। মৃতদেহে পচন ধরেছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য জিন্নাহ পোস্টগ্র্যাজুয়েট মেডিকেল সেন্টারে পাঠানো হয়েছে। মেডিকেল রিপোর্ট আসার পর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।’
হুমাইরার এই মৃত্যু নিয়ে প্রতিবেশীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক ও রহস্য। তাঁরা পুলিশকে জানিয়েছেন, অনেক দিন ধরেই তাঁরা হুমাইরাকে দেখেননি, এমনকি তাঁর বাসায় কাউকে আসতে বা যেতেও দেখেননি। এ নিয়ে ডিআইজি আসাদ রাজা আরও বলেন, ‘আমরা মামলাটি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। প্রাথমিকভাবে কিছু বলা কঠিন, তবে বিষয়টি রহস্যজনক। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিস্তারিত জানা যাবে। এখনো নিশ্চিত নই, এই মৃত্যু স্বাভাবিক, নাকি এর পেছনে কোনো অপরাধ জড়িত।’
হুমাইরা আসগর প্রায় এক যুগ ধরে পাকিস্তানের বিনোদন অঙ্গনে কাজ করছিলেন। তিনি মূলত মডেলিং দিয়েই ক্যারিয়ার শুরু করেন। পরে টেলিভিশন রিয়েলিটি শো তামাশা ঘর-এর মাধ্যমে পরিচিতি পান। অভিনয় করেছেন ২০১৫ সালের আলোচিত ছবি ‘জালিবি’–তেও। সে সময় তাঁর অভিনয় প্রশংসিত হয়েছিল। তবে সম্প্রতি তিনি কাজ কমিয়ে দিয়েছিলেন বলে জানা গেছে। একাকী জীবনযাপন করতেন, ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে খুব একটা প্রকাশ্যে আসতেন না। হুমাইরার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের বিনোদন অঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও অনেকে তাঁর রহস্যময় মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনার সঙ্গে কেউ জড়িত কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পর জানা যাবে, মৃত্যুর নেপথ্যে কোনো অপরাধের ছায়া আছে কি না।