ঢাকা   সোমবার ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭ ভাদ্র ১৪৩২

সেচ্ছাসেবক দলের নেতার বিরুদ্ধে ৪৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ

সংখ্যালঘুর জমি দখল, তদন্তে কমিটি গঠন

সেচ্ছাসেবক দলের নেতার বিরুদ্ধে ৪৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ

সাতক্ষীরার তালা উপজেলা সেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে শপিং ভ্যালি ফুড প্রোডাক্টস কোম্পানির নামে একটি সেমাই কারখানায় তালা ঝুলিয়ে দিয়ে ৪৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে।  এ ঘটনায় চার সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করা হলেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি জেলা সেচ্ছাসেবক দলের নেতারা। এ ঘটনার পর রফিকুল ইসলাম আবারও এক হিন্দু পরিবারসহ দুই ব্যক্তির প্রায় ১৫ বিঘা জমি দখল করে নিয়েছে।

এ ঘটনায় চাঁদাবাজ রফিকুলের থেকে পরিত্রান চেয়ে গত শনিবার জেলা সেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তরুন কান্তি চক্রবর্তী ও  সায়রা খাতুন নামের দুই ভুক্তভোগী। এর আগে ২২ আগস্ট তালার শপিং ভ্যালি ফুড প্রোডাক্টস কোম্পানিতে তালা দিয়ে চাঁদা দাবির বিষয়ে অভিযোগ দেন কারখানা মালিক।

অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম সাতক্ষীরার তালা সদরের আটারই গ্রামের মৃত. আক্কাজ আলী মোড়লের ছেলে এবং একই সঙ্গে তিনি স্বেচ্ছাসেবক দলের তালা উপজেলার আহবায়ক।

খোজ খবর নিয়ে জানা যায়, গত ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বেপরোয়া হয়ে উঠেন সাতক্ষীরার তালা উপজেলা সেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক রফিকুল ইসলাম। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, আওয়ামী লীগের নেতা-কমী, বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে চাঁদা ও সংখ্যালঘু পরিবারের জমি দখল নিয়ে আলোচনায় আসেন রফিকুল ইসলাম ওরফে দাদু ভাই।

গত সপ্তাহে উপজেলার হরিশচন্দ্রকাটি গ্রামের মৃত গৌরপদ চক্রবর্তীর ছেলে তরুন কান্তি চক্রবর্তী ও মৃত শাহবুদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী সায়রা খাতুনের কয়েকটি জমি দখল করেন রফিকুল ইসলাম ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী। এ বিষয়ে তারা কয়েকবার তালা থানা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেও কোন সুফল পাননি।

ভূক্তভোগী হরিশচন্দ্রকাঠি  গ্রামের তরুন কান্তি চক্রবর্তী বলেন, ‘আমি হিন্দু হলেও বিএনপির সূচনা লগ্ন থেকেই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আমার জীবদ্দশায় পাঁচ বার শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সংস্পর্শে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। আমি বিএনপি'র কর্মী হওয়ার শর্তেও কোন কারণ ছাড়াই জোর পূবক আমার জমি দখল করে নিয়েছে তালা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক রফিকুল ইসলাম ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী। বাঁধা দিতে গেলে মালুরবাচ্চা বলে গালি দিয়ে দেশ ছেড়ে ভারতে যাওয়াসহ জীবননাশের হুমকি দেয় রফিকুল। সে প্রভাবশালী হওয়ায় এ ঘটনায় তালা থানা পুলিশের কাছে কয়েকবার অভিযোগ দিলেও কোন ফল হয়নি। পরবর্তীতে বিষয়টি উপজেলা বিএনপির নেতাদের জানানো হলেও সাংগঠনিকভাবে তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তাই বাধ্য হয়ে জেলা সেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক এ্যাডঃ কামরুজ্জামান ও সদস্য সচিব শেখ শরিফুজ্জামান সজিবের কাছে অভিযোগ দিয়েছি।’

অপরদিকে, শপিং ভ্যালি ফুড প্রোডাক্টস কোম্পানির ব্যবস্থাপন পরিচালক জহর হাসান জানান, ২০২২ সালে মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে ইমরান হোসেন রিপনের কাছ থেকে তার ৩৩ শতক জমির মধ্যে ২০ শতক জমি ক্রয় করা হয় কোম্পানির নামে। বাকি ১৩ শতক জমি বিক্রির শতে ১৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা পরিশোধ করার পাশাপাশি ১০ বছরের একটি ডিড করে বন্দবস্ত নিয়ে সেমাই ফ্যাক্টরির করা হয়। ২০২২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারী স্থানীয় একাধিক জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা ও পার্শ্ববর্তী কয়েক গ্রামের জনসাধারণের অংশগ্রহনে উদ্বোধনের মাধ্যমে কোম্পানিটি তার কাযক্রম শুরু করে। দীঘ ৪ বছর কোন ঝামেলা ছাড়াই সেমাই ফ্যাক্টরিটি চলে আসছিল। রফিকুল ইসলাম রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ফ্্যাক্টরির মালিকের কাছে ৪৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে কোম্পানির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের হত্যার হুমকি দিয়ে গত ১৩ জুলাই সকালে কারখানায় প্রবেশ করে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। ওই সময় তিনি সেমাই কারখানায় ভাঙচুরও করেন। ঘটনার সকল ভিডিও ফুটেজ ও কল রেকর্ড সংগ্রহে রয়েছে।

কোম্পানির নৈশ্য প্রহরী হযরত আলী জানান, রফিকুল ইসলাম সম্প্রতি কারখানার কাজে বাঁধা দেন। এখানে তার জমি আছে বলে আমাদেরসহ ৫০ টি হত্যা করা হবে হুমকি দেন হুমকি দেন।

তালা উপজেলা সেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক রফিকুল ইসলাম বলেন, হিন্দু পরিবারের যে জমি দখলের কথা উঠেছে সেটি মিথ্যা ও বানোয়াট। তবে তার বিরুদ্ধে জেলা সেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক ও সদস্য সচিবের কাছে যে লিখিত অভিযোগ হয়েছে সেটি তিনি এখনও জানেন না বলে জানান।  অপরদিকে তালার শপিং ভ্যালী সেমাই কারখানায় তালা ঝুলিয়ে দিয়ে কোম্পানির ম্যানেজার ও নৈশ্য প্রহরীসহ ৫০টি হত্যার হুমকি বিষয়ে বলেন, দখল নয় সেখানে আমার সম্পত্তি রয়েছে। তাই আমি বলেছি ৫০টি হত্যা হলেও ওই জমি দখলে নেব।

সাতক্ষীরা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ন-আহবায়ক ও তদন্ত কমিটির সদস্য মহাসীন আলম জানান. সেচ্ছাসেবক দলের নেতা রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হয়েছে। আশাকরি যারা নিযাতিত তারা ন্যয় বিচার পাবেন। অভিযোগকারির বিরুদ্ধে ঘটনা প্রমাণিত হলে সাংগঠািনক ভাবে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।