facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ১৯ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪

Walton

স্ট্রোক বুঝবেন যেসব লক্ষণে


২৫ মে ২০২৩ বৃহস্পতিবার, ১০:০৫  এএম

স্বাস্থ্য ডেস্ক

শেয়ার বিজনেস24.কম


স্ট্রোক বুঝবেন যেসব লক্ষণে

স্ট্রোক মস্তিষ্কের রোগ। এ রোগে আক্রান্ত হলে রক্তনালিতে জটিলতা দেখা দেয়। মস্তিষ্কের একাংশ হঠাৎ কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। যদি মস্তিষ্কের কোনো অংশের রক্ত চলাচল বিঘ্নিত হয় (আঘাতজনিত ছাড়া) এবং তা ২৪ ঘণ্টার বেশি স্থায়ী হয় কিংবা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রোগী মৃত্যুবরণ করে, তাহলে এ অবস্থার নাম স্ট্রোক। স্ট্রোক হলে শরীরের যে কোনো এক দিকে হাত-পা ও মুখমণ্ডল প্যারালাইসিস হয়ে থাকে।

লক্ষণ: স্ট্রোকের উপসর্গ ও লক্ষণ চেনার জন্য বিশ্বব্যাপী ‘বি ফাস্ট’ বাক্যবন্ধ ব্যবহার করা হয়। ‘বি’ অর্থ ব্যালেন্স বা ভারসাম্য। হঠাৎ ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাওয়া। ‘ই’ অর্থ আই বা দৃষ্টি। হঠাৎ দেখতে সমস্যা। ‘এফ’ অর্থ ফেস বা মুখমণ্ডল। হঠাৎ মুখের একদিক বাঁকা হয়ে যাওয়া। ‘এ’ অর্থ আর্ম বা বাহু। হঠাৎ এক হাত দুর্বল হয়ে যাওয়া। ‘এস’ অর্থ স্পিচ বা হঠাৎ কথা জড়িয়ে আসা। ‘টি’ অর্থ টাইম বা সময়। এসব লক্ষণ দেখামাত্র যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসার চেষ্টা করা।

স্ট্রোকের কারণ: সাধারণত বয়স ৫৫ বছরের বেশি হলে স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা থাকে। পুরুষের মধ্যে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি। এছাড়া উচ্চ রক্তচাপ, বহুমূত্র বা ডায়াবেটিস, হৃদরোগী, অতিরিক্ত মোটা ব্যক্তিরা স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারেন। পরিবারে কারও স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের ইতিহাস থাকলে, ধূমপান বা অ্যালকোহল পানের অভ্যাস থাকলে, হৃৎপিণ্ডের অসুখ, যেমন নাড়ির অস্বাভাবিক স্পন্দন, হৃৎপিণ্ডের ক্রিয়া বন্ধ হওয়া, হৃৎপিণ্ডের সংক্রমণ থাকলে, কোনো হরমোন থেরাপি অথবা জন্মনিয়ন্ত্রণ ওষুধ সেবন করা, আগে এক বা একাধিক স্ট্রোক কিংবা টিআইএ (ট্রানজিট ইসকেমিক অ্যাটাক) হয়ে থাকলে স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।

স্ট্রোকের ধরন: মস্তিষ্ক আক্রান্ত হওয়ার ওপর ভিত্তি করে স্ট্রোক দুই ধরনের হতে পারে।

ইসকেমিক স্ট্রোক: মস্তিষ্কের রক্তনালিতে রক্ত জমাট বেঁধে অথবা শরীরের কোনো অংশ, বিশেষ করে হৃৎপিণ্ড থেকে জমাট বাঁধা রক্ত মস্তিষ্কের রক্তনালিতে এসে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যে স্ট্রোক হয়, তার নাম ইসকেমিক স্ট্রোক। এ ধরনের স্ট্রোকে রোগীর মৃত্যুর আশঙ্কা কম থাকলেও ভালো হতে দীর্ঘ সময় লাগে। এতে অনেক রোগী স্থায়ী পঙ্গুত্ব নিয়ে বেঁচে থাকেন।

হেমোরেজিক স্ট্রোক: মস্তিষ্কের কোনো রক্তনালি ফেটে গিয়ে মস্তিষ্কের ভেতর রক্ত ছড়িয়ে পড়লে তা হেমোরেজিক স্ট্রোক। এ ধরনের স্ট্রোকে উপসর্গ নির্ভর করে মস্তিষ্কের কোন অংশ কীভাবে কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার ওপর। অনেক ক্ষেত্রে রোগীর উচ্চ রক্তচাপ থাকে এবং রোগী অজ্ঞান অবস্থায় হাসপাতালে আসেন। এই স্ট্রোকে রোগীর মৃত্যুর আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। যারা প্রাথমিক ধকল কাটিয়ে উঠতে পারেন, দ্বিতীয়বার রক্তক্ষরণের ঝুঁকি তাঁদের কম থাকে। স্থায়ী পঙ্গুত্বের আশঙ্কাও কম।

চিকিৎসা: স্ট্রোকের ধরন ও প্রকারভেদ অনুযায়ী চিকিৎসাও বিভিন্ন রকমের। তবে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো স্ট্রোকের লক্ষণ খেয়াল করে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া। স্ট্রোক চিকিৎসার প্রধান অংশ হলো নার্সিং এবং নিয়মিত চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীর সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ ও পরিমিত ব্যবস্থা গ্রহণ।

প্রতিরোধের উপায়: স্ট্রোক প্রতিরোধ করা সম্ভব। এ জন্য স্ট্রোকের ঝুঁকি সম্পর্কে জানা ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন পদ্ধতি মেনে চলতে হবে। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন পদ্ধতি হলো নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করা, নিয়ন্ত্রণে রাখা। অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় খাবার না খাওয়া, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা। সঠিক নিয়মে সময়মতো খাবার খাওয়া। নিয়মিত ডায়াবেটিস পরীক্ষা করে সতর্কভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা। প্রতিদিন শারীরিক পরিশ্রম করা। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা। শাকসবজি, ছোট মাছ, সামুদ্রিক মাছ, শুঁটকি, দুধ, আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত।

লেখক: অধ্যাপক; ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি বিভাগ, এনআইএনএস; চেম্বার: পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লি.

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: