facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ১৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার, ২০২৪

Walton

জিএমজির পর বন্ধ হচ্ছে ইউনাইটেড এয়ারও


০৫ আগস্ট ২০১৭ শনিবার, ০২:০৭  পিএম

শেয়ার বিজনেস24.কম


জিএমজির পর বন্ধ হচ্ছে ইউনাইটেড এয়ারও

বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কতৃপক্ষের (বেবিচক) অসহযোগিতায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থায় পড়েছে বেসরকারি খাতের অন্যতম উড়োজাহাজ কোম্পানি ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ বাংলাদেশ লিমিটেড। শেয়ারবাজারে ২০১০ সালে তালিকাভুক্ত বেসরকারি উড়োজাহাজ খাতে এপর্যন্ত একমাত্র কোম্পানি ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ। 

নানা জটিলতার মুখে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায় বেসরকারি খাতের আরেক কোম্পানি জিএমজি এয়ারলাইনস। কার্যক্রম আরও জোরদার করার অংশ হিসেবে ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রি করে ৩০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে কোম্পানিটি। কিন্তু শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়া চললেও জটিলতার মুখে বন্ধ হয়ে যায় জিএমজি এয়ার। এতে বড় অংকের ক্ষতির সম্মুখিন হন প্লেসমেন্টধারীরা।

বেবিচকের সঙ্গে মতানৈক্যে নির্ধারিত সময়ে উড়োজাহাজের ‘সি’ চেক (ভারী রক্ষনাবেক্ষন) করার অনুমতি ও ফিটনেস সার্টিফিকেট পাচ্ছে না ইউনাইটেড এয়ার। এছাড়া পরিদর্শনের নামে হয়রানি, তদন্তের দীর্ঘসুত্রিতা ও উড্ডয়ন উপযোগী উড়োজাহাজকে ফ্লাইট সিডিউল বাতিলে বাধ্য করছে বলে ইউনাইটেড এয়ার অভিযোগ জানিয়েছে। এসব কারনে বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির ১০টি উড়োজাহাজের সবগুলোই গ্রাউন্ডেড হয়ে আছে। রক্ষনাবেক্ষন করতে না পারায় ২০১৬ সালের ৫ মার্চ থেকে ইউনাইটেড এয়ারের বানিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এমনকি নতুন করে সাতটি উড়োজাহাজ সংগ্রহের সব প্রক্রিয়া চুড়ান্ত হলেও বেবিচকের অনাপত্তি পত্র না পাওয়ায় সেটিও ভেস্তে গেছে।

কোম্পানি সুত্রে জানা যায়, ২০১২ সালে দেশী-বিদেশী মোট ৩৬টি রুটে ইউনাইটেডের ফ্লাইট কার্যক্রম চালু ছিল। বেবিচকের সঙ্গে বিরোধে ২০১৪ সাল থেকে ইউনাইটেড এয়ারের উড়োজাহাজগুলো গ্রাউন্ডেড হতে থাকে। ২০১৫ সালের শেষে সচল উড়োজাহাজের অভাবে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ করতে বাধ্য হয় কোম্পানিটি। এতে প্রতিষ্ঠানটির বানিজ্যিক কার্যক্রম সীমিত হয়ে পড়ে। আর ২০১৬ সালের ৫ মার্চ থেকে ইউনাইটেড এয়ারের বানিজ্যিক কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কোম্পানির অধিকাংশ কর্মী প্রতিষ্ঠানটি ছেড়ে চলে যান। আয় না থাকায় যেসব কর্মী প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত ছিলেন চলতি বছরের শুরুতে তাদেরকেও বিনা বেতনে বাধ্যতামূলক ছুটি দেওয়া হয়েছে।

একটি নির্দিস্ট সময় ফ্লাইট অপারেশন করার পর অথবা ১৫ মাস অতিবাহিত করার পর উড়োজাহাজের ‘সি চেক’ (ভারী রক্ষনাবেক্ষন) করা বাধ্যতামূলক। আর এ সি চেক করা নিয়ে বেবিচকের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে ইউনাইটেড এয়ার। বেবিচক ও ইউনাইটেড এয়ার সুত্রে জানা যায়, স্থানীয়ভাবে ‘সি চেক’ করা নিয়ে ২০১৩ সাল থেকে বেবিচকের সঙ্গে বিবাদ শুরু হয়। বৈদেশিক মুদ্রা ও ব্যয় সাশ্রয়ীর কারনে নিজেদের উড়োজাহাজের সি চেক দেশে সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেয় ইউনাটেডের প্রকৌশল বিভাগ। স্থানীয়ভাবে সি চেক সম্পন্ন করার জন্য ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে বেবিচকের কাছে অনুমতি চায় প্রতিষ্ঠানটি। প্রথমবার দুই জন বিদেশী প্রকৌশলী আনার শর্তে বেবিচক সি চেকের অনুমোদনও দেয়। বেবিচকের শর্ত মেনে ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি নিজেদের ১৭০ সিটের একটি জেট বিমানের সি চেক শুরু করে এবং দেড় মাসের মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়। তবে সি চেকের শেষ পর্যায়ে বেবিচকের পরিদর্শকরা নানা অভিযোগ করে ইউনাইটেড এয়ার কতৃপক্ষের কাছে। এতে কিছুটা বিলম্ব হলেও উড়োজাহাজটির সি চেক সম্পন্ন করে।

পরবর্তিতে ‘সি চেক’ সম্পন্ন হলেও বিভিন্ন অজুহাতে কালকেক্ষপন করে প্রায় দুই বছর পর সার্টিফিকেট অফ এয়ারওয়ার্দিনেস বা ফিটনেস সার্টিফিকেট দেয় বেবিচক। এতে উড্ডয়ন সক্ষমতা সত্বেও ফিটনেস সার্টিফিকেট না পাওয়ায় প্রায় দুই বছর উড়োজাহাজটি বসিয়ে রাখতে বাধ্য হয়েছে ইউনাইটেড কতৃপক্ষ। আর গত দুই বছর ধরে ইউনাইটেড এয়ারের কোন উড়োজাহাজের সি চেকের অনুমতিই দিচ্ছে না বেবিচক। এ কারনে ভারত ও পাকিস্থানে ইউনাইটেড এয়ারের দুটি উড়োজাহাজ সি চেকের অনুমতির অভাবে দুই বছরেরও বেশি সময় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।

এ বিষয়ে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের পরিচালক (প্রকৌশল) অবসরপ্রাপ্ত উইং কমান্ডার ইঞ্জিনিয়ার এম সাহাব উদ্দিন আহমেদ জানান, বিদেশে ১৭০ সিটের একটি জেট বিমানের সি চেক সম্পন্ন করতে প্রায় এক মিলিয়ন ডলার বা ৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা খরচ হয়। তবে একই মানের সি চেক দেশে করলে খরচ হয় দুই লাখ ডলার। তিনি বলেন, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের প্রকৌশল বিভাগের স্থানীয়ভাবে সি চেকের সক্ষমতা রয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে জেট বিমান ছাড়াও ড্যাশ-৮ ও এটিআর বিমানের চারটি সি চেক সম্পন্ন করেছি, যেগুলো প্রায় ১৫ হাজার ঘন্টার বেশি ফ্লাইট করেছে।

তিনি আরো বলেন, পরবর্তি সময়ে আরো চারটি ১৭০ আসনবিশিস্ট জেট বিমান স্থানীয়ভাবে সি চেক করার অনুমতি চাইলেও বেবিচক সম্মতি দেয়নি। এ অবস্থায় ফ্লাইট সিডিউল চালু রাখতে ৮৫ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন রুমানিয়ার রোমএরো এম.আর.ও প্রতিষ্ঠানে উক্ত চারটি উড়োজাহাজ ‘সি’ চেক করার প্রস্তাব দেয় বেবিচকে। তবে দেড় বছর পার হলেও অনুমতি মেলেনি।

প্রসঙ্গত বেবিচকের নিয়মানুযায়ী, ‘সি চেক’ যে প্রতিষ্ঠানে হবে সিভিল এভিয়েশনের দুইজন কর্মকর্তা সে স্থান পরিদর্শনের পর যোগ্য মনে হলে সি চেক করার অনুমতি দেয় বেবিচক। উক্ত কর্মকর্তাদের পরিদর্শনের ব্যয়ভার সংশ্লিস্ট এয়ারলাইন্স কতৃপক্ষকে বহন করতে হয়। তবে বেবিচকের কর্মকর্তারা দীর্ঘ সময়েও বিদেশ ভ্রমনে সরকারী অনুমতি (জি.ও) না পাওয়ায় উক্ত উড়োজাহাজগুলোর সি চেকের অনুমতি দেয়া হয়নি। ইউনাইটেড এয়ার কতৃপক্ষ অভিযোগ করেছে যে, বেবিচক এ কাজের জন্য সরকারী অনুমতি পাবার চেস্টাই করেনি।

বেবিচকের বৈরী আচরনের কারনে বিপুল পরিমানের আর্থিক ক্ষতির স্বীকার হওয়ায় ২০১৬ সালে বেবিচক ও এর শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ মামলা দায়ের করে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উড়োজাহাজ ক্রয়, মেরামত, লাইসেন্সের নবায়নসহ ইউনাইটেড এয়ারের কোন কাজই করছেনা বেবিচক কতৃপক্ষ। মামলা প্রত্যাহার না হলে প্রতিষ্ঠানটির এসব প্রক্রিয়ায় কোন সম্মতি না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেবিচক কতৃপক্ষ। সম্প্রতি বেবিচকের এক বোর্ড সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা গেছে। বোর্ডসভার এ সিদ্ধান্তের কথা ইউনাইটেড এয়ার কতৃপক্ষকেও জানিয়ে দেয়া হয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেবিচকের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এছাড়া নানাবিধ চার্জ বাবদ প্রায় ৭৭ কোটি টাকার বকেয়া অর্থ পরিশোধ নিয়ে সমঝোতা না হওয়ায় অনুমতি প্রদান বন্ধ রাখার একটি কারণ বলে বেবিচক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

এদিকে ইউনাইটেড এয়ার নতুন উড়োজাহাজ সংগ্রহের প্রচেস্টা চালালেও বেবিচক অনাপত্তিপত্র না দেয়ায় সে প্রক্রিয়ায়ও থমকে গেছে। ২০১৬ সালের ১ জুন নতুন করে সাতটি উড়োজাহাজ সংগ্রহের জন্য শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) প্রতিষ্ঠানটিকে ৪০১ কোটি টাকা সংগ্রহের অনুমতি দেয়। এজন্য সিঙ্গাপুর ও মালায়েশিয়াভিত্তিক তিন কোম্পানির বিমান সরবরাহের বিপরীতে অভিহিত মূল্যে ১০ টাকা দরে মোট ৪০ কোটি শেয়ার নেওয়ার কথা ছিল। তবে বিএসইসির অনুমোদন প্রাপ্তির এক বছরেরও বেশি সময় পার হলেও বেবিচকের অনাপত্তিপত্র না পাওয়ায় নতুন করে উড়োজাহাজ সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়েছে ইউনাইটেড এয়ার।

কোম্পানিটির আবেদনের প্রেক্ষিতে আগের অনুমোদন সংশোধন করে গত বছরের ২২ ডিসেম্বর পরবর্তি তিন মাসের মধ্যে শেয়ার ইস্যুর শর্ত দেয়। এ সময়সীমার মধ্যেই উড়োজাহাজ সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয় ইউনাইটেড এয়ার। পরবর্তিতে আরো তিন মাস সময় দিলেও বেবিচকের অনাপত্তিপত্র না পাওয়ায় ভেস্তে যাচ্ছে উড়োজাহাজ সংগ্রহের প্রক্রিয়া। এছাড়া বিএসইসি গত বছরের ১৬ জুন বন্ড ইস্যু করে কোম্পানিটিকে আরও ২২৪ কোটি টাকা সংগ্রহের অনুমতি দেয়। রাষ্ট্রায়ত্ব বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আইসিবি পিছিয়ে আসায় বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে কোন অর্থই সংগ্রহ করতে পারেনি ইউনাইটেড এয়ার।

এ বিষয়ে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরী বলেন, গ্রাউন্ডেড হয়ে থাকা উড়োজাহাজগুলোর সি চেক করাতে গত দুই বছর ধরে চেস্টা চালাচ্ছি বেবিচকের অনুমতি নেয়ার জন্য। নানা অজুহাত দেখিয়ে তারা অনুমতি দিচ্ছেনা। একইভাবে নতুন করে সাতটি উড়োজাহাজ সংগ্রহের বিষয়টি চুড়ান্ত হলেও বেবিচকের অনাপত্তিপত্র না পাওয়ায় এ প্রচেস্টাও ভেস্তে যাচ্ছে। যদিও উড়োজাহাজের বিনিময়ে ইতিমধ্যেই ৮৮ কোটি টাকার শেয়ার ফনিক্স এয়ারক্রাফট লিজিং এবং তার টিএসি এভিয়েশনের নামে ইস্যু করা হয়েছে। অথচ বেবিচকের বৈরী আচরনের কারনে নতুন উড়োজাহাজ দেশে আনা যাচ্ছেনা।

 

 

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: