
বাজার মূলধন হারালো ৪ হাজার কোটি টাকা, তবে বেড়েছে লেনদেন
বিদায়ী সপ্তাহে (০৪-০৮ মে) পতনের ধারায় লেনদেন হয়েছে দেশের শেয়ারবাজারে। সূচকের পাশাপাশি দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বাজার মূলধন কমেছে ৪ হাজার ১২৫ কোটি টাকা। ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার বিশ্লেষণ থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন ০.৬৩ শতাংশ হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৫২ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকায়। আগের সপ্তাহ শেষে এ অঙ্ক ছিল ৬ লাখ ৫৬ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১৫.৬৪ পয়েন্ট বা ০.৩২ শতাংশ। পাশাপাশি, ডিএসই-৩০ সূচক কমেছে ২.৪৩ পয়েন্ট (০.১৩%) এবং ডিএসইএস সূচক কমেছে ১৯.৯১ পয়েন্ট (১.৮২%)।
সূচকের পতন সত্ত্বেও ডিএসইতে লেনদেন বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। সপ্তাহজুড়ে মোট লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৪১৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় ১ হাজার ৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকা বেশি। শতাংশ হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ৭৪.৯৭ শতাংশ।
প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন দাঁড়িয়েছে ৪৮৩ কোটি ১২ লাখ টাকা, আগের সপ্তাহে যা ছিল ৩৫২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ গড় লেনদেন বেড়েছে ১৩০ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বা ৩৭.০৪ শতাংশ।
এই সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৯৪টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ১৪১টির দর বেড়েছে, ২৩০টির কমেছে এবং ২৩টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) নিম্নমুখী ধারা
অন্যদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) সূচকের পতন লক্ষ করা গেছে। প্রধান সূচক সিএএসপিআই কমেছে ০.৭৩ শতাংশ, দাঁড়িয়েছে ১৩,৭০৩.৮৭ পয়েন্টে। সিএসসিএক্স সূচক ০.৭৩ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৮,৩৬৬.৬৬ পয়েন্টে।
এছাড়া সিএসই-৫০ সূচক ০.২৫ শতাংশ এবং সিএসই-৩০ সূচক ০.০১ শতাংশ কমেছে। সিএসআই সূচক কমেছে ১.৬০ শতাংশ, যার অবস্থান এখন ৮৮৩.৬২ পয়েন্ট।
সিএসইতে সপ্তাহজুড়ে মোট লেনদেন হয়েছে ৫২ কোটি ৪১ লাখ টাকা, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় ১৬ কোটি ২২ লাখ টাকা কম। আগের সপ্তাহে এ অঙ্ক ছিল ৬৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।
এ বাজারে মোট ৩০৭টি কোম্পানির শেয়ার ও ফান্ড ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১১১টির, কমেছে ১৬৮টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৮টির শেয়ার দর।
লেনদেনের সেরা ১০ কোম্পানি
বিদায়ী সপ্তাহে (০৪-০৮ মে) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি। সপ্তাহজুড়ে প্রতিদিন গড়ে প্রতিষ্ঠানটির ৩৮ কোটি ১৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা মোট লেনদেনের ৭.৯০ শতাংশ।
ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনা থেকে জানা গেছে, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে বীচ হ্যাচারির শেয়ারে। প্রতিষ্ঠানটির গড় দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৩১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৬.৫৯ শতাংশ।
তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে মিডল্যান্ড ব্যাংক, যার গড় দৈনিক লেনদেন ছিল ২৬ কোটি ০২ লাখ টাকা—ডিএসইর মোট লেনদেনের ৫.৩৯ শতাংশ।
এছাড়া, সাপ্তাহিক লেনদেনের শীর্ষ দশ কোম্পানির তালিকায় রয়েছে:
এনআরবি ব্যাংক – ১৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা
সিটি ব্যাংক – ১২ কোটি ৪২ লাখ টাকা
বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (বিএসসি) – ১০ কোটি ০৩ লাখ টাকা
লাভেলো আইসক্রিম – ৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকা
কেডিএস অ্যাকসেসরিজ – ৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা
উত্তরা ব্যাংক – ৮ কোটি ১০ লাখ টাকা
আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ – ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, এই প্রতিষ্ঠানগুলোই সপ্তাহজুড়ে বিনিয়োগকারীদের নজর কেড়েছে সবচেয়ে বেশি।
দর হারানো শীর্ষে খুলনা পাওয়ার
বিদায়ী সপ্তাহে (০৪-০৮ মে) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত বেশ কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারদরে বড় ধরনের পতন লক্ষ্য করা গেছে। সাপ্তাহিক বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দরপতনের তালিকায় সবচেয়ে ওপরের অবস্থানে রয়েছে খুলনা পাওয়ার কোম্পানি।
সপ্তাহজুড়ে খুলনা পাওয়ারের শেয়ারদর ১৩.৯৫ শতাংশ কমেছে। আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল ১২ টাকা ৯০ পয়সা, যা বিদায়ী সপ্তাহের শেষে নেমে এসেছে ১১ টাকা ১০ পয়সায়। এক সপ্তাহে শেয়ারদর কমেছে ১ টাকা ৮০ পয়সা।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরপতন হয়েছে এনার্জিপ্যাক পাওয়ার-এর। এ কোম্পানির শেয়ারদর ২০ টাকা থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ১৭ টাকা ৩০ পয়সায়, যা ১৩.৫০ শতাংশ পতনের সমান।
তৃতীয় স্থানে রয়েছে এইচআর টেক্সটাইল। সপ্তাহজুড়ে শেয়ারদর ২৬ টাকা ৮০ পয়সা থেকে কমে ২৩ টাকা ৪০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে, অর্থাৎ দরপতন হয়েছে ১২.৬৯ শতাংশ।
এই তিন কোম্পানির পাশাপাশি আরও কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারদরে উল্লেখযোগ্য পতন দেখা গেছে। তা হলো:
মিথুন নিটিং – ১১.৩৬%
বসুন্ধরা পেপার মিলস – ১১.২৭%
সোনারগাঁও টেক্সটাইল – ১১.২৪%
গ্লোবাল হেভি কেমিক্যাল – ১০.৯৬%
ন্যাশনাল টি কোম্পানি – ১০.৬৭%
দুলামিয়া কটন – ১০.৫৫%
এসকে ট্রিমস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ – ১০.৪৩%
বিশ্লেষকদের মতে, বাজারে মুনাফা নেওয়ার প্রবণতা ও বিনিয়োগকারীদের সতর্ক অবস্থান এই পতনের পেছনে ভূমিকা রাখতে পারে।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে বারাকা পতেঙ্গা
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বিদায়ী সপ্তাহ (০৪-০৮ মে ২০২৫) শেষে শীর্ষ দর বৃদ্ধিকারী কোম্পানির তালিকায় শীর্ষস্থান দখল করেছে বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার। ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার বিশ্লেষণে এই তথ্য উঠে এসেছে।
সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ৫৭.৮৪ শতাংশ। আগের সপ্তাহে ১০ টাকা ২০ পয়সা দরে লেনদেন শেষ হলেও, বিদায়ী সপ্তাহের শেষে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ টাকা ১০ পয়সায়। এক সপ্তাহে দর বেড়েছে ৫ টাকা ৯০ পয়সা।
সাপ্তাহিক দর বৃদ্ধির তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বারাকা পাওয়ার। আগের সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে প্রতিষ্ঠানটির দর ছিল ৯ টাকা ৩০ পয়সা। বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে ক্লোজিং দর দাঁড়িয়েছে ১২ টাকা ৫০ পয়সায়। সপ্তাহের ব্যবধানে কোম্পানিটির দর বেড়েছে ৩ টাকা ২০ পয়সা বা ৩৪.৪১ শতাংশ।
দর বৃদ্ধির তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে মিডল্যান্ড ব্যাংক। আগের সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে প্রতিষ্ঠানটির দর ছিল ২০ টাকা ৮০ পয়সা। বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে যার ক্লোজিং দর দাঁড়িয়েছে ২৬ টাকা ৭০ পয়সায়। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিষ্ঠানটির দর বেড়েছে ৫ টাকা ৯০ পয়সা বা ২৮.৩৭ শতাংশ।
অন্যদিকে, দর বৃদ্ধির তালিকায় আরও রয়েছে—
আইসিবি সোনালী ব্যাংক মিউচুয়াল ফান্ড – ২৪.০৭%
আইএসএন – ২২.২৬%
এসএমইএলএলইসি মিউচুয়াল ফান্ড – ২০.৬৯%
আইএফআইসি মিউচুয়াল ফান্ড – ২০.৫৯%
সিএপিএমআইবিবিএল মিউচুয়াল ফান্ড – ১৯.২৩%
প্রোগ্রেসিভ লাইফ – ১৭.১১%
ব্যাংক এশিয়া – ১৬.৫৬%
এই তালিকায় মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর আধিক্য এবং বারাকা গ্রুপভুক্ত কোম্পানির সক্রিয় অবস্থান বিনিয়োগকারীদের নজর কেড়েছে।
৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ
শেয়রবাজারে তালিকাভুক্ত ৪ কোম্পানি আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। কোম্পানিগুলো হলো-
লিন্ডে বাংলাদেশ লিমিটেড, বিএটি বাংলাদেশ লিমিটেড, আইডিএলসি ফাইন্যান্স পিএলসি এবং ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড। কোম্পানিগুলো চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি’২৫-মার্চ’২৫) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। কোম্পানিগুলোর সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
লিন্ডে বাংলাদেশ লিমিটেড:
প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৫ টাকা ২৯ পয়সা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৬ টাকা ৩৯ পয়সা। আলোচ্য সময়ে শেয়ার প্রতি ক্যাশ ফ্লো ছিল ১ টাকা ৮০ পয়সা, যেখানে আগের বছর একই সময়ে ছিল ৩ টাকা ২২ পয়সা। ৩১ মার্চ, ২০২৫ তারিখে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সমন্বিত সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ২৩৪ টাকা ৬৩ পয়সা।
বিএটি বাংলাদেশ লিমিটেড:
কোম্পানিটির প্রথম প্রান্তিকের শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ৫ টাকা ৮৯ পয়সা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৭ টাকা ৬৫ পয়সা। আলোচ্য সময়ে শেয়ার প্রতি ক্যাশ ফ্লো ছিল ১৭ টাকা ৬২ পয়সা, যেখানে আগের বছর একই সময়ে ছিল ১০ টাকা ৪৯ পয়সা। ৩১ মার্চ, ২০২৫ তারিখে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সমন্বিত সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৯৭ টাকা ৭৭ পয়সা।
আইডিএলসি ফাইন্যান্স পিএলসি:
প্রথম প্রান্তিকে আইডিএলসি ফাইন্যান্সের শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১ টাকা ২২ পয়সা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৮৫ পয়সা। আলোচ্য সময়ে শেয়ার প্রতি ক্যাশ ফ্লো ছিল ২ টাকা ৫৪ পয়সা, যেখানে আগের বছর একই সময়ে ছিল মাইনাস ১৭ টাকা ৫৩ পয়সা। ৩১ মার্চ, ২০২৫ তারিখে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সমন্বিত সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৪৯ টাকা ৪৮ পয়সা।
ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড:
কোম্পানিটির প্রথম প্রান্তিকের শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ২৫ পয়সা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২৮ পয়সা। আলোচ্য সময়ে শেয়ার প্রতি ক্যাশ ফ্লো ছিল ১১ পয়সা, যেখানে আগের বছর একই সময়ে ছিল ১০ পয়সা। ৩১ মার্চ, ২০২৫ তারিখে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সমন্বিত সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ২১ টাকা ৩৮ পয়সা।