facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার, ২০২৪

Walton

উত্তরাধিকারীদের জন্য কতটুকু সম্পদ রেখে যাওয়া উত্তম


১৭ মে ২০২৩ বুধবার, ১১:৩৮  এএম

ধর্ম ডেস্ক

শেয়ার বিজনেস24.কম


উত্তরাধিকারীদের জন্য কতটুকু সম্পদ রেখে যাওয়া উত্তম

মুমিনের জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য সম্পদ অর্জন করা নয়; কিন্তু ইবাদতের পাশাপাশি সম্পদ অর্জন করা দোষণীয় নয়; বরং পবিত্র কোরআনে ইবাদতের পর হালাল পদ্ধতিতে সম্পদ অর্জনের প্রতিও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, যখন নামাজ আদায় হয়ে যায়, তখন জমিনে ছড়িয়ে পড়ো, আর আল্লাহর অনুগ্রহ অনুসন্ধান করো এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফল হতে পার। (সুরা : জুমা, আয়াত : ১০)

এখানে মূলত আলোচনাটি জুমা নিয়ে হলেও আরেকটি জিনিস পরিষ্কার হয়ে যায় যে ইবাদতের পর সম্পদ উপার্জনে ইসলামের উৎসাহ রয়েছে। তবে সম্পদ অর্জনকে ইবাদতের ওপর প্রাধান্য দেওয়া যাবে না। শেখ সাদি একটি বাণীতে বলেন, সম্পদ জীবনের শান্তির জন্য; কিন্তু জীবন শুধুই সম্পদ কুক্ষিগত করার জন্য নয়।

তাই মুমিনের উচিত, ইবাদতের পাশাপাশি হালাল পদ্ধতিতে রিজিক অনুসন্ধান করা এবং অর্জিত সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করার চেষ্টা করা, মানুষের উপকার করা। নিজের অবর্তমানে পরিবার-পরিজনকে যেন অন্যের কাছে হাত পাততে না হয়, তাই তাদের জন্য কিছু সম্পদ রেখে যাওয়া।

ইসলামে পরিবারের জন্য পর্যাপ্ত সম্পদ রাখার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনে পরিবারের জন্য রেখে যাওয়া সম্পদকে কল্যাণ বলা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের যখন মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন তোমরা কোনো কল্যাণ (সম্পদ) রেখে গেলে তার ব্যাপারে মাতা-পিতা ও স্বজনদের জন্য ন্যায়সংগতভাবে অসিয়ত করে যাওয়া তোমাদের জন্য ফরজ করা হলো। আল্লাহভীরুদের জন্য এটা দায়িত্ব।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮০)

আয়াতের ব্যাখ্যায় আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, যে ব্যক্তি সন্তানদের জন্য ৬০ দিনার (স্বর্ণমুদ্রা) পরিমাণ অর্থ রেখে যায়নি, সে ভালো পরিমাণ সম্পদ রেখে যায়নি। আর তাউস (রহ.) এর পরিমাণ ৮০ দিনার বলেছেন। (তাফসিরে ইবনে কাসির : ১/৮৯)

এখন প্রশ্ন হলো, তৎকালীন যুগের ৬০ দিনার বা ৮০ দিনার বর্তমান বাজারদর হিসেবে কত টাকার সমপরিমাণ হবে? উপমহাদেশের আলেমদের মতে, নবীজি (সা.)-এর যুগে যে দিনার ছিল, বর্তমান যুগে তাতে ৪.৩৭৪ গ্রাম পরিমাণ সোনা হয়। (আদ্দুররুল মুখতার : ২/২৭৬, মিফতাতুল আওজান পৃ: ২১, আল আউজানুল মাহমুদা, পৃ: ৭০)

অর্থাৎ নবীজি (সা.)-এর যুগের দিনারকে যদি আমরা টাকায় হিসাব করতে চাই, তাহলে প্রতি দিনারে ৪.৩৭৪ গ্রাম স্বর্ণের বাজারমূল্য হিসাব করতে হবে।

যেমন বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের ওয়েবসাইটের তথ্যমতে আজকের (১৬ মে) বাজারে প্রতি গ্রাম সোনার দাম (২২ ক্যারেট) ৮ হাজার ৪৪০ টাকা। সে হিসাবে প্রতি দিনার সোনা তথা ৪.৩৭৪ গ্রাম সোনার দাম দাঁড়ায় ৩৬ হাজার ৯১৬ টাকা ৫৬ পয়সা। এর আলোকে উল্লিখিত আয়াতের ব্যাখ্যায় আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-এর মতানুযায়ী হিসাব করলে এর মূল্য দাঁড়ায় ২২ লাখ ১৪ হাজার ৯৯৩ টাকা ৬০ পয়সা। আর তাউস (রহ.)-এর মতানুযায়ী হিসাব করলে আজকের বাজারে এর মূল্য দাঁড়াবে ২৯ লাখ ৫৩ হাজার ৩২৪ টাকা ৮০ পয়সা।

সুতরাং মুমিনের দায়িত্ব হলো অর্থ ব্যয় ও সংরক্ষণে ভারসাম্য রক্ষা করা। সে যেমন নিজের পরকালীন কল্যাণকে উপেক্ষা করবে না, তেমনি সন্তানদের নিঃস্ব রেখে যাবে না। নবীজি (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে এ ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) বলেন, বিদায় হজে একটি কঠিন রোগে আমি আক্রান্ত হলে, আল্লাহর রাসুল (সা.) আমার খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য আসতেন। একদা আমি তাঁর কাছে নিবেদন করলাম, আমার রোগ চরমে পৌঁছেছে আর আমি সম্পদশালী। একমাত্র কন্যা ছাড়া কেউ আমার উত্তরাধিকারী নেই। তবে আমি কি আমার সম্পদের দুই-তৃতীয়াংশ সদকা করতে পারি? তিনি বলেন, না। আমি আবার নিবেদন করলাম, তাহলে অর্ধেক। তিনি বলেন, না। অতঃপর তিনি বলেন, এক-তৃতীয়াংশ আর এক-তৃতীয়াংশও বিরাট পরিমাণ অথবা অধিক। তোমরা ওয়ারিশদের অভাবমুক্ত রেখে যাওয়া, তাদের খালি হাতে পরমুখাপেক্ষী অবস্থায় রেখে যাওয়ার চেয়ে উত্তম। (বুখারি, হাদিস : ১২৯৫)

অতএব প্রতিটি মুমিনের কর্তব্য তাঁর উত্তরাধিকারীদের যতটুকু সম্ভব সম্পদ রেখে যাওয়ার চেষ্টা করা। তাদের ছোটবেলা থেকেই আল্লাহমুখী হওয়ার শিক্ষা দেওয়া, যাতে তারা উত্তরাধিকার সম্পদ গুনাহের কাজে ব্যয় না করে।

লেখক: মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা; সূত্র: কালের কণ্ঠ

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: